ফুটবল আনন্দের। ফুটবল নিষ্ঠুরও। এটি আবারো প্রমাণ হলো। পেশাদার ক্যারিয়ারে কী পাননি মেসি-রোনালদো। উভয়ের কাপবোর্ডে শোভা পাচ্ছে ফুটবলের শীর্ষ সব ট্রফিই। তারপরও খালিহাতে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলেন সময়ের এ সেরা দুই ফুটবল তারকা।আর এতে রঙ হারালো রাশিয়া বিশ্বকাপ। ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে আর দেখা যাবে না এবারের আসরে। আর এটাই হয়তো দুজনের শেষ বিশ্বকাপ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে রোনালদোর বয়স দাঁড়াবে ৩৭-এ। আর মেসির ৩৫। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে নিয়ে যান মেসি। এবার দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হলো। ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হার দেখে মেসির আর্জেন্টিনা। ভাঙাচোরা ডিফেন্সের কারণে মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। শেষ ষোলোর অপর ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারের হতাশায় ডোবে রোনালদোর পর্তুগাল। দুই নক্ষত্রের এমন বিদায়ে হৃদয় ভাঙে তাদের কোটি সমর্থকের। মেসি ও রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে এখনো কিছু বলেননি। ফর্ম বিবেচনায় জাতীয় দলে আরো দেয়ার আছে তাদের। বিশ্বকাপ যাত্রা শেষে রোনালদোকে নিয়ে পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস এই কথাই বলেন। গত ১০ বছর ধরে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর মেসি ও রোনালদোর দখলে (পাঁচবার করে)। ক্লাব ফুটবলে দুইজন খেলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদে।
এটি ছিল মেসি ও রোনালদোর চতুর্থ বিশ্বকাপ। প্রথম দুই ম্যাচে ৪ গোল করে দারুণ শুরু পান রোনালদো। এর মধ্যে রয়েছে স্পেনের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে প্রথম গোলের দেখা পান মেসি। ফ্রান্সের বিপক্ষে দুইটি গোল বানিয়ে দেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। যোগ করা সময়ে সার্জিও আগুয়েরোর হেড আসে মেসির পাস থেকেই। হতাশার রাশিয়া বিশ্বকাপে দুইটি অর্জনে নাম লেখান রোনালদো। বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে দিয়েগো ম্যারাডোনার করা সর্বোচ্চ ৬ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন পর্তুগালের মহাতারকা। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন রোনালদো। ৮৫ গোল নিয়ে হাঙ্গেরি কিংবদন্তি ফ্রাঙ্ক পুসকাসকে ছাড়িয়ে যান সিআর সেভেন। সব মিলিয়ে এ তালিকায় রোনালদোর সামনে কেবল ইরানের আলী দাইয়ি (১০৯ গোল)। বিশ্বকাপে রোনালদোর মোট গোল ৭টি। গত আসরের সেরা খেলোয়াড় মেসির নামের পাশে ৬ গোল (অধিনায়ক হিসেবে পাঁচটি)। তবে ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের কোনো ম্যাচেই গোলের দেখা পাননি তারা। মেসি ও রোনালদো দুইজনই নিজ নিজ দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১২৮ ম্যাচে ৬৫ গোলের মালিক মেসি। রোনালদোর ৮৫ গোল ১৫৪ ম্যাচে। পর্তুগালের জার্সিতে রোনালদোর একমাত্র সাফল্য ২০১৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো)। মেসির বড় আক্ষেপের জায়গাটা এখানেই। বার্সার হয়ে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে এখনো কোনো শিরোপা জিততে পারেননি ম্যারাডোনার উত্তরসূরি। চারটি ফাইনাল খেলেও ট্রফি উঁচিয়ে ধরা হলো না মেসির। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকা। যুবদলের হয়ে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০০৫ বিশ্বকাপ ও ২০০৮ অলিম্পিক মেসির সান্ত্বনা।