আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো জাতীয় ঐক্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ছাড়া তথাকথিত ঐক্য জনগণের ঐক্য হতে পারে না। এই ঐক্যে জনগণের সমর্থন নেই। গতকাল সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে দলীয় প্রচার কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় বিভিন্ন পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। কুমিল্লা ও ফেনীতে আয়োজিত পথসভা বিশাল সমাবেশে পরিণত হয়। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আজ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন সমাবেশে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পৃথক সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে হবে।দলীয় নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বলে তা দলীয় ফোরামে তোলারও পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের।

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র জনগণ প্রতিহত করবে: কুমিল্লায় আয়োজিত সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি গত ১০ বছরে ১০ মিনিটও আন্দোলন করতে পারেনি। এই মাসে না ওই মাসে, এই বছর না ওই বছর- আন্দোলন হবে কোন বছর। ১০ বছরেও আন্দোলন জমেনি, মানুষ বাঁচে কয় বছর। তাই এখন তারা লন্ডনে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করার নামে বিএনপি যে ‘জ্বালাও-পোড়াও’ ও ‘আগুন সন্ত্রাস’ করেছিল এবারও তেমন কিছু করার চেষ্টা করলে তা জনগণ মোকাবিলা করবে। কুমিল্লা মহানগরীর টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় মন্ত্রী বলেন, খালেদার আমলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হতো, তিনি বিদ্যুৎ দেননি- দিয়েছেন বিদ্যুতের খাম্বা। এখন দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, তা কে দিয়েছে- শেখ হাসিনা।

১৬ কোটি মানুষের হাতে ১৪ কোটি মোবাইল কে দিয়েছে, বছরের প্রথম দিনে ৩৫ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে কে দিয়েছে, নারীদের সম্মান কে নিশ্চিত করেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের পরিচয় কে নিশ্চিত করেছে- এর একটাই উত্তর শেখ হাসিনা। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এখন মানুষ শান্তিতে বাস করছে। আর এ উন্নয়নের কারিগর হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এমপি তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

এর আগে সকাল ১১টায় মন্ত্রী কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আউয়াল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপি, অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম সরকার, বাদল রায়, ড. আবদুল মান্নান জয়, রোশন আলী মাস্টার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিকালে মন্ত্রী চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরের এইচ জে পাইলট হাইস্কুল মাঠে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, তাজুল ইসলাম এমপি প্রমুখ। পথসভায় সভাপতিত্ব করেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান।

আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো ঐক্য হতে পারে না: এদিকে ফেনীতে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে তাদের নিয়ে কিসের ঐক্য? দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় কেমন করে? যদি তেমন কোনো ঐক্য হয়, তবে তা হলো তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্য সামপ্রদায়িক ঐক্য; যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষকদের ঐক্য। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো ঐক্য হতে পারে না। শহরের ট্রাংক রোডের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে তাদের নিয়ে ঐক্য জনগণ মেনে নেবে না। মহানগর নাট্য মঞ্চে শনিবার বিকালে জাতীয় ঐক্যের যে সমাবেশ হচ্ছে সেটা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে বলেছেন তারা সেখানে যাননি। তাদের সমাবেশে মাত্র সাত-আটশ’ লোক হয়েছে। জনগণ তাদের সঙ্গে নেই বলে তারা ভয় পাচ্ছে।

বিএনপিকে ‘নালিশ পার্টি’ আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত ১০ বছরে ১০ মিনিটও রাস্তায় দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। তারা বলে, ঈদের পরে আন্দোলন। আর কীসের ঈদ! এভাবে ১০ বছর পার করেছে তারা। আন্দোলন হবে কোন বছর? মানুষ বাঁচে কয় বছর? তারা জনগণের আস্থা হারিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। আওয়ামী লীগ তো একটা দল; আমাদেরও কিছু ভুলত্রুটি আছে। তার জন্য জনগণের কাছে আমরা ক্ষমা চাই।’ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবার আমলনামা নেত্রীর কাছে জমা আছে। জরিপ হচ্ছে। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এখন আমাদের মার্কা একটাই, সেটা হলো নৌকা।’

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। খারাপ লোকদের দলে টানবেন না। আপনারা ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বি.কম-এর সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সমসদ্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার সস্পাদক ও সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, সংরক্ষিত মহিলা এমপি জাহান আরা বেগম সুরমা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, সাইফ উদ্দিন নাসির প্রমুখ।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তরাঞ্চলে রেলপথে নির্বাচনী যাত্রার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মসূচি শুরু করে। সড়কপথে নির্বাচনী যাত্রার প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে কক্সবাজার সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।