তোফাজ্জল লিটন, নিউইয়র্ক:‘এই মেলায় জিনিস-পাতি নিয়ে আসতে আমার যে ৬০ ডলার খরচ হয়েছে তাই উঠবে না শাড়ি-গহনা বিক্রি করে। মেলা আয়োজকদের চার শত টাকা কি করে তোলবো আমি আছি সেই চিন্তায়। লাভ করার কথা তো কল্পনাও করি না। আমাদের স্টল ভাড়া দেওয়ার সময় বলছে অনেক বড় মেলা হবে। আইসা দেখি মানুষই নাই। ভালো শিল্পী আর প্রচার না থাকলে কি মানুষ হয় ? শাওনের গানের সময় কিছু মানুষ হয় কিন্তু তারা তো কেউ কিছু কিনে না।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউ ইয়র্কে ‘হুমায়ূন মেলা’য় আগত বিক্রেতা রনি বুটিকসের কর্ণধার আল-আমিন।
নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে ৭-৮ অক্টোবর দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিতর্কিত ‘হুমায়ূন মেলা’। দুপুর ৩টায় মেলা উদ্বোধন করেন হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সম্পাদক নঈম নিজাম এবং নিউইয়র্কের কনস্যুল জেনারেল সাদিয়া ফাইজুন্নেসা।
প্রথম দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দর্শক ও অতিথিসহ মোট মানুষ ছিলো ২২জন। মেলা শুরু হবার পরই বসে শাড়ি-গহনা এবং বইয়ের স্টল। সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যখন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছিলেন তখন দর্শক সারিতে ২৭জন বসা ছিলেন। সন্ধ্যায় গানের অনুষ্ঠান শুরু করেন কৃষ্ণা তিথি। তিনি ভালো গাইলেও দর্শক বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭জনে।
শাওনের গান শুরুর আগে মেলার আয়োজক শো টাইম মিউজিক’র কর্ণধার আলমগীর খান আলম দর্শক সারিতে দাড়িঁয়ে কথা বলছিলেন সাপ্তাহিক দেশ কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক দর্পণ কবির এবং সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহাব সাগরের সঙ্গে। তাদের আলাপওে এক পর্যায়ে আলম বলেন, আগামীবার ‘হুমায়ূন মেলা’ নাম পরিবর্তন কওে ‘হুমায়ূন সম্মেলণ করে দিবো। আমি করি বানিজ্যক আয়োজন এধরনের মেলা আয়োজন আমার কাজ না। সামনের বার যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী মনে করেন নিউইয়র্কে, তাদেও হাতে ছেড়ে দিবো এই মেলা। ৫০ জনের কমিটি করে দিবো, আমি আর কিছুতে নাই।
শাওনের গান শোনার জন্য দর্শক বাড়তে থাকে ক্রমে। বেশ কয়েক জন গাওয়ার পর মঞ্চে আসেন এস আই টুটুল ও শাওন। এর মধ্যে দর্শক বেড়েছে ১০০-১২০জনে। প্রথম দিনে বই বিক্রি হয়েছে ২৫টি। শাওনের লেখা ‘ হুমায়ূন সঙ্গীত নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী’ বই বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তিনটি। শাড়ি-গহনা বিক্রেতাদের কান্না করার মতো অবস্থা। কারণ স্টল ভাড়া তো দূরে থাক তাদের গাড়ি ভাড়া উঠবে কি না সন্দেহ ।
‘ মেলার শেষ দিনের অবস্থাও প্রথম দিনের মতো। সেমিনার হয়েছে । কবিতা আবৃত্তি হয়েছে। দর্শক সেই ২৫-৩০জন। সন্ধ্যার পর মেলায় যখন গান শুরু হয় তখন কিছ’ দর্শক জড়ো হয়। এ যেনো অন্য অনুষ্ঠানের মতোই আরেকটি গানের আসর। শাওনের গানের সময়ই দর্শক একাগ্র হয়ে গান শুনে। হুমায়ূন মেলা শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলো শাওনের গানের অনুষ্ঠানে। দর্শকের কেউ কেউ বলেছেন মেলার নাম ‘হুমায়ূন মেলা’ না হয়ে ‘শাওন মেলা’ হলেই উপযুক্ত হতো।’ কথাগুলো বলছিলেন জ্যামাইকা থেকে আগত সাজ্জাদ হোসেন ।
ব্লগার তানভীর রাব্বানি বলেন, নিউইয়র্ক বইমেলায় আসলে হুমায়ূন আহমেদকে পূরবী বসু এবং তাঁর ¯^ামী জ্যতি প্রকাশ দত্ত হাই-হ্যালো পর্যন্ত করতেন না । তাঁরাই আজ হুমায়ূন মেলার বিশেষ অতিথি! নিউইয়র্কের সাহিত্য আসরে তারা একসময় হুমায়ূন আহমেদকে বলতেন ক্লাস থ্রি-ফোরের ছাত্রদের লেখক।
‘আগামি প্রকাশনীর ওসমান গনি ১৯৯৪ সালে নিউজার্সীতে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে হুমায়ূন আহমেদ-এর জনপ্রিয়তা দেখে তাঁকে অপতস্থ করার জন্য হুমায়ূন আজাদকে দিয়ে ‘অপন্যাসিক’ আখ্যায়িত করে নিউইয়র্কের পত্রিকাগুলোতে ফ্যাক্স পাঠিয়েছিলেন।’ এবং খবরটি প্রকাশ হয়েছিলো তৎকালিন সাপ্তাহিক ঠিকানা, বাঙালি এবং অধুনালুপ্ত প্রবাসীতে ।
সেই ওসমান গনি এবারের হুমাযূন মেলা উপল¶ে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে বাণী দিয়েছেন। অতিথি হয়ে এসেছেন। আবার ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছর আরো অনেক প্রকাশকে নিয়ে হুমায়ূন মেলা করবেন ।