ব্যাটে-বলে অসাধারণ একটি দিন কাটলো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। আর ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে লাগাম সাকিব বাহিনীর হাতে। টেস্টে বাংলাদেশের ৫০০ ছড়ানো ইনিংস ছিল এর আগেও ৮ বার। কিন্তু জবাব দিতে নেমে প্রতিপক্ষ হারিয়েছে ২৯ রানে ৫ উইকেট। দারুণ ব্যাটিংয়ের দিনে বল হাতেও টাইগাররা দেখালো দাপুটে নৈপুণ্য। আগের দিনের ২৫৯/৫ সংগ্রহটাকে গতকাল সাকিব-মাহমুদুল্লাহরা টেনে নেন ৫০৮ রানে। পরে বোলারদের ক্যারিশমাতে বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে ১২৮ বছর আগের টেস্ট ইতিহাসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে এক সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ১৫৪ ওভারে করেছে ৫০৮ রান।এই ইনিংসে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ১১ ব্যাটসম্যানই ছুঁয়েছে দুই অঙ্ক। কিন্তু দিনের ২৪ ওভার বাকি থাকতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে ৭৫ রান। উইকেট হারিয়েছে তারা ৫টি। এখনো ফলোঅন এড়াতে তাদের প্রয়োজন ২৩৪ রান। কিন্তু সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজরা যেভাবে ছোঁবল দিয়েছেন তাতে তৃতীয় দিনটা ক্যারিবীয়দের জন্য হতে পারে আরো বিভীষিকার। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন দারুণ সেঞ্চুরি হাঁকানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা অনেক ভালো ব্যাটিং করেছে। আপনি যদি আমাদের স্কোরকার্ড দেখেন, সবাই ডাবল ফিগারে গিয়েছে। আমার ইনিংসটা একটু বড় হয়েছে, সাকিবের ইনিংসটা বড় হয়েছে। সাদমান খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। আর সবাই স্টার্ট পেয়েছিল। আর যদি বোলিংয়ের দিক বলি, আমার মনে হয় আমরা বেটার জায়গায় বল করেছি আজ (গতকাল)। সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমরা চেয়েছিলাম দুই তিনটা উইকেট নিয়ে এগিয়ে যেতে। এখানে আধা ঘণ্টায় পাঁচটা উইকেট পড়েছে। এই বিষয়টা আমাদের বেশ আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।’ টসে জিতে প্রথম দিন পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ছিল ২৫৯ রান। সেখান থেকে পরের দিন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দ্বিতীয় বার ৫শ’ রান তুলে নেয় ইনিংসে। এই মিরপুর মাঠেই ২০১২-তে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে খেলেছিল নিজেদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৫৬ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে এ মাঠে এটি তৃতীয় ৫শ’ বাংলাদেশ দলের। আর গতকালের ইনিংসটি জায়গা করে নিয়েছে টাইগারদের ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ৭ম স্থান। অন্যদিকে যেখানে বাংলাদেশ রান তুলেছে পানির মতো সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেঁপেছে থরথর করে। সাকিব ও মিরাজ যেন তাদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন মৃত্যুদূত হয়ে। ক্যারিবীয়দের প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানই বোল্ড। তাও স্পিনে। এটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই প্রথম।
বাংলাদেশের দিনের শুরুটা হয়েছিল মারমুখী ব্যাটিংয়ে। সাকিব আগের দিন যতটা নমনীয় ছিলেন। দ্বিতীয় দিন ছিলেন ততটাই আক্রমণাত্মক। আগের দিন মাত্র একটি চারের মার ছিল তার। গতকাল হাঁকান আরো ৫টি। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। তবে দলকে উপহার দিয়ে যান মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ১১১ রানের নির্ভরতার জুটি। দল ৩০০ রান ছুঁতেই আউট হন অধিনায়ক। আর বাকিটা ছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ধৈর্য পরীক্ষার কঠিন লড়াই। ২০৩ বল খেলেছেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। সাড়ে ৮ বছর পর এক মাসের কম সময়ে তিনি দুই সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। সাকিবের পর তার বড় জুটি ছিল লিটন কুমার দাসের সঙ্গে। কোনো বিশেষজ্ঞ পেসার দলে না থাকায় ব্যাটসম্যান ছিলেন ৯ জন। তার সফলতাও পেয়েছে দল। লিটন ও রিয়াদ মিলে মধ্যাহ্নবিরতি পর্যন্ত ক্যারিবীয় বোলারদের অস্থির করে তোলেন। ৬২ বলে ফিফটি তুলে লিটন আবার টেস্টে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে বাজে শটে উইকেট খোয়ান লিটন। তার আগে ৯২ রানের আরেকটি কার্যকর জুটিতে অবদান রাখেন তিনি। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ১৮, তাইজুল ইসলাম ২৬ ও তরুণ অফস্পিনার নাঈম হাসান ১২ রান করে দলের জন্য দারুণ অবদান রাখেন। মাহমুদুল্লাহ তার ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রান করেন ১০ চারে ২৪২ বল খেলে। ক্রিজে কাটান ৬ ঘণ্টারও বেশি সময়।
এরপর বল হাতে হাঁটতে শুরু করেন নতুন এক রেকর্ডের পথে। সেটি শুরু হয় অধিনায়ক সাকিবের হাত দিয়ে। প্রথম ওভারে বাজে শট খেলে সাকিবের শিকার ব্রাথওয়েট। এরপর বোল্ড কাইরান পাওয়েল মিরাজের বলে। এখানেই শেষ নয় সাকিবের বলে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড সুনিল আমব্রিস। চতুর্থ বোল্ড শেই হোপ। আর লাইন মিস করে বোল্ড রোস্টন চেজ। তাতেই রচিত হয় টাইগারদের ক্রিকেট ইতিহাসে স্পিনারদের হাত ধরে নতুন ইতিহাস।