দুদক থেকে বলছি, আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। বাঁচতে চাইলে টাকা-পয়সা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলুন। নইলে চাকরি হারাবেন কিন্তু!’ এভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা করার ভয় দেখিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। শুক্রবার রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য আনিসুর রহমান (৩৬) ও ইয়াসিন তালুকদার (২৩)কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র?্যাব-২ কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী এসব কথা জানান।
প্রতারক চক্রটির বিষয়ে অবহিত করে গত ২৭শে জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে র্যাবের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান ও কর্মকাণ্ডে দুদক জনগণের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। এই আস্থাকে পুঁজি করে প্রতারণার সুযোগ নিয়েছে এই চক্রটি। এরা ২০১৪ সাল থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০০ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় ৩৫-৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রের সদস্যরা। ২০১৪ সালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার এক বিকাশ প্রতারকের কাছ থেকে এসব কাজের হাতেখড়ি বলে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা। এদের অন্তত ৭ থেকে ১০টি গ্রুপ রয়েছে।
যারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। অনেকেই ভয় পেয়ে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিতো। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিকাশ ও অন্যান্য অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতো চক্রটি। র?্যাব জানায়, প্রথমে তারা বিভিন্ন সরকারি অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সরজমিন পর্যবেক্ষণ করে। গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড দেখে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের টার্গেট করা হতো। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর না পেলে ফোন ডিরেক্টরি থেকে নাম্বার নিয়ে মামলা করার হুমকি দিতো। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো অভিজ্ঞতাও হয়েছে দুই প্রতারকের। তারা জানায়, অনেক কর্মকর্তাকে ফোন দিলে উল্টো তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখাতেন কেউ কেউ। এমন ঘটনা হলে সঙ্গে সঙ্গে ওই নম্বরের সিমটি নষ্ট করে ফেলতেন প্রতারকরা। দুই সদস্য আনিস ও ইয়াসিন দুজনে থাকতো ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়।
নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট ও মুঠোফোনের সিম বিক্রির ব্যবসা আছে। শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, তৈরি পোশাক শ্রমিক ও গৃহপরিচারিকারা সিম কিনতে গেলে তাদের আঙুলের ছাপ ও কাগজপত্র কৌশলে রেখে দিতো চক্রটি। পরে, এসব নিম্নবিত্ত মানুষের নামে একাধিক সিম নিবন্ধন করিয়ে এসব নম্বর ব্যবহার করে প্রতারণা করতো। আটকের সময় আনিছুর রহমানের কাছ থেকে ১৪টি বিকাশ অ্যাকাউন্ট করা সিম পাওয়া গেছে। এসব সিম দিয়ে মোট আট লাখ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। সিমের পাশাপাশি তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার একটি চেকও পাওয়া গেছে। আরেক প্রতারক ইয়াসিনের ১২টি বিকাশের অ্যাকাউন্টে মোট ১ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।