ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ দলের নিয়মিত প্রতিপক্ষ কে? উত্তর খুঁজতে খুব কষ্ট হওয়ার কথা নয়। যারা ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখেন তারা এক বাক্যে বলে দেবেন- জিম্বাবুয়ে। একটা সময় ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যন্ডের মতো বড় দলগুলো যখন নাচ উঁচু করে বাংলাদেশে সফর করা থেকে বিরত থাকতো, কিংবা নিজ দেশে ডাকতো না, সেই সময় প্রকৃত বন্ধুর মতো জিম্বাবুয়ে ছিল বাংলাদেশের পাশে। সেই দলটিরই চলছে চরম দুঃসময়। আইসিসি তাদের সাময়িক নিষিদ্ধ করেছে। দেশটির সরকারও ভেঙ্গে দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। যে কারণে তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা এখন কঠিন হয়ে গেছে। এমন সময়ে বন্ধুর প্রতি হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের পর বিসিবি তাদের নিয়েই আয়োজন করবে ত্রিদেশীয় সিরিজ।
তবে এই সিরিজ এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ জিম্বাবুয়ে বিসিবির কাছে সময় নিয়েছে। বাংলাদেশ সফর নিয়ে তারা নিজ দেশের সরকারের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে আলোচনাও। বিসিবিও তাদের সময় দিয়ে ভালো খবরের অপেক্ষায় আছে। এক সময় বাংলাদেশের প্রতি জিম্বাবুয়ের অবদানের কারণেই তাদের প্রতিদান দিতে চায় বিসিবি। গতকাল বিসিবির প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘একটা সময় বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনামূলক বেশি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতো জিম্বাবুয়ে। আমাদের অনুরোধে জিম্বাবুয়েই বেশি হাত বাড়িয়ে দিতো। এখন আমরাও তাদের দিকে হাত বাড়িয়েছি। এখন আমরা যেমন ওদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আসবে কি আসবে না, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটা তারাই জানিয়ে দিক। আমরা কিছু বলতে চাই না।’
আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যস্ততা। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ করে এখন বিশ্রামে আছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ঈদের ছুটি কাটিয়ে টাইগাররা এক সপ্তাহ পর মাঠে নামবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি নিতে। একমাত্র টেস্টটি শুরু হওয়ার কথা ৫ই সেপ্টেম্বর। এই টেস্টের পরই আফগান ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে অস্থিরতার কারণে এখন এই সিরিজটি পড়েছে অনিশ্চয়তায়। যে কারণে বিসিবি জিম্বাবুয়ে না আসলে কী হবে সেটি নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়। তারা যে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সেটি জানিয়েছে বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন সুজন। তিনি বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড তাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলছে। কালও (সোমবার) জানিয়েছে যে তারা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। আজ-কালের মধ্যে এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে তারা।’
ধারণা করা হচ্ছে, যেহেতু জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে খারাপ সময় চলছে তাই হয়তো দেশটির সফরের সব খরচই বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু গাঁটের পয়সা খুব একটা খরচ হবে না বলেই জানালেন বিসিবির সিইও। কারণ দ্বি-পাক্ষীয় সিরিজের নিয়মানুযায়ী আসা-যাওয়ার খরচ বহন করবে জিম্বাবুয়েই। নিজামুদ্দিন সুজন বলেন, ‘দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের যেটা রীতি সেই অনুযায়ী জিম্বাবুয়ে আসবে। বিমান ভাড়া ও খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেট বোর্ডই দেখবে। বিসিবি দেখবে হোটেল, স্থানীয় যাতায়াত ও নিরাপত্তা, যেটি সব স্বাগতিক বোর্ডই দেখে থাকে। আর আইসিসির সঙ্গে যে সমস্যাটা আছে, সেটি দ্রুত সমাধান হয়ে গেলে অক্টোবরে আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি কোয়ালিফাইং খেলার কথা জিম্বাবুয়ের। এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারলে দুবাই পর্যন্ত বিমান ভাড়া তারা আইসিসি থেকেই পাবে।’
জিম্বাবুয়ের উপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞ এই সিরিজে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা কম হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিসিবির সিইও জানিয়েছেন কোন সমস্যাই হবে না। তিনি সুজন বলেন, ‘‘ম্যাচের স্ট্যাটাস নিয়ে কোনো অসুবিধা নেই। যেটা হয়েছে, তারা আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে না। জিম্বাবুয়ের বোর্ড তাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলছে, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিরিজটি ‘অন’ রাখার। আমাদের সাথে সর্বশেষ যে কথা হয়েছে, তারা বলেছে যে সিরিজটি ‘অন’ আছে। আশা করছি, ২-১ দিনের মধ্যে ওদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারব।’’
তবে শেষ পর্যন্ত যদি জিম্বাবুয়ে না আসতে পারে তাহলে কী হবে? শুধু কি আফগানিস্তানের বিপক্ষেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে টাইগাররা, নাকি সিরিজটিই বাতিল হয়ে যাবে? না, তখন সিরিজটি হয়ে যাবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ।