প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তাদের দূরে না ঠেলে দেন অনুরোধ করেছেন কয়েক ব্ছর ধরে আওয়ামী লীগের সমালোচনামুখর এই রাজনীতিক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকালে দলের এক আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও আমি বলছি, সবাইকে দূরে না ঠেলে সমগ্র দেশকে বুকে আগলিয়ে ধরার চেষ্টা করুন। না হলে সামনে সমূহ বিপদ, সেই বিপদ থেকে আপনি মুক্তি পাবেন না।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই আলোচনা সভায় গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনও বক্তব্য দেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বরখেলাপ করছে বলে অভিযোগ তুলে কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “১৫ অগাস্ট গিয়েছিলাম। আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখে এসএসএফের একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন এসে বললেন, মেল নট এলাউড, ওনলি ফর ফ্যামিলি। পরে শুনে চলে আসলাম। সত্যিই যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিনে আমাদের প্রবেশের অধিকার না থাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আপনি বলুন, আর যদি আমাদের অধিকার থাকে তাহলে এ রকম করবেন না।
“যা করেছেন-একটু জিজ্ঞেস করে দেখেন কাদের সিদ্দিকীর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর লাশ যেখানে পড়েছিল, সেখানে নামাজ পড়ার অধিকার আছে কি নাই।”
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়ার আগের দিন কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করে এই অভিপ্রায়ের কথা জানালে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বলেও জানান কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “আমি ১৪ তারিখ ড. কামাল হোসেনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। স্যারকে বলেছিলাম কালকে নামাজ পড়তে যাব কি হয় জানি না। সাথে সাথে তিনি বলেছিলেন, আমরা কি ওই বাড়িতে যেতে পারব? আমরা বোধ হয় পারব না। তাই আমাদের দূর থেকেই দোয়া করার দরকার, আমরা দূর থেকে দোয়া করি।”
বিএনপিকে ‘জিইয়ে রেখেছে’ আওয়ামী লীগ
বিএনপিকে আওয়ামী লীগই টিকিয়ে রেখেছে বলে দাবি করেছেন কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “বিএনপিকে জিইয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে জিইয়ে রেখেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যদি ছয় মাস বিএনপির নাম মুখে না আনতেন, এটার আজকে যা অবস্থা, তার চারভাগের একভাগ হয়ে যেত।
“বিএনপি-বিএনপি বলে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপিকে বানিয়ে রেখেছে। এটা তার নিজের স্বার্থে বানিয়ে রেখেছে। বিএনপি না থাকলে শেখ হাসিনা থাকে না, এটা তিনি জানেন বলেই তিনি এই কাজটি করেন।”
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি সেই জন্যই বিএনপিকে পরিষ্কার কথা বলছি, জাতির পিতা নিয়ে যদি আপনাদের মধ্যে যদি দ্বন্দ্ব থাকে, তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত চিন্তা করনেন না যে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আবার আপনারা যাবেন।
“বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যদি বিএনপির এই রকম বিতর্ক থাকে, বিএনপির মধ্যে যদি এমন দ্বন্দ্ব থাকে, তাহলে বিএনপি রাজনীতি করতে পারবে না। বিএনপি একটি মাত্র দল বাংলাদেশে এটা সত্য কথা নয়।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় সে সময়ের সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ ও গোয়েন্দা প্রধান কর্নেল জামিলের মরণোত্তর ফাঁসির দাবি জানান কাদের সিদ্দিকী।
ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া জাতির একজন অন্যতম নেতা, কিন্তু তারেক রহমান নয়। গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রায় সব কিছুতেই নেতৃত্ব তারেক রহমানের হাতে চলে গিয়েছিল। যেহেতু ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নাই, সেহেতু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি।”
এই আলোচনা সভায় বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেছিলাম গতকালকে। তিনি বললেন, ‘ভাই আমার কালকে তিনটা প্রোগ্রাম, আমি তো ভাই আসতে পারব না’।
“আমি সাথে সাথে ফখরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি মিটিং না থাকত তাহলে কি আপনাকে আশা করা যেত? তিনি বললেন, ভাই আপনি তো জানেন আমি অত সাহসী মানুষ না। পাঁচ মিনিট পরে নজরুল ইসলাম খানকে (স্থায়ী কমিটির সদস্য) আমি ফোন করেছিলাম। তিনি বললেন, গাজীপুরে তার প্রোগ্রাম আছে, তিনি আসতে পারবেন না।”
আলোচনায় বক্তব্যে সরকারের সমালোচনা করে কামাল হোসেন বলেন, “জাতির জনক বলে তিনি যে রাষ্ট্র রেখে গেছেন সেই রাষ্ট্রের মধ্যে যেগুলো আজকে ঘটছে এগুলো ষোলআনা বঙ্গবন্ধুর যে আদেশ ছিল, তার পরিপন্থি। জনগণ ক্ষমতার মালিক- তিনি তো সংবিধানে স্বাক্ষর করে দিয়ে গেছেন। আপনারা নিজেদের কি মালিকের ভূমিকায় দেখছেন? যারা দেশ শাসন করছে, বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত এই আদেশকে তারা অমান্য করা হচ্ছে, এর বিপরীত কাজ করা হচ্ছে।
“বঙ্গবন্ধুকে আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি আর উনার কথা আমরা ষোলআনা অমান্য করি এটাকে কি মিলানো যায়? এর উত্তর কী? আমরা তো কোনো উত্তর পাই না। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্নের বাংলাদেশ এটা কী আমরা পাচ্ছি? না, পাচ্ছি না।”
বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
তিনি বলেন, “ঐক্য ছাড়া স্বৈরাচারকে সরানো যাবে না, ফ্যাসিবাদকে সরানো যাবে না। আসুন আমরা শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, ছাত্র-শ্রমিকরা-আপনারা পরিবর্তন চাইবেন কিন্তু কিছু বির্সজন দেবেন না, এতে পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তনের জন্য কনট্রিবিউট করতে হবে। আমি সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীদের আহ্বান জানাব- আমরা যত দেরি করব তত দেশ জাতির ক্ষতি হবে। দেশটা নরকে পরিণত হয়েছে।”
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মহাসচিব হাবিবুর রহমান খোকা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী বেগম নাসরিন সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, হাবিব উন নবী সোহেল, রেহান মুস্তাফিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।