বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের পর খোদ জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান নিয়ে সমালোচনা করেন। তার অভিযোগ- এনসিএল, বিসিএলে সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করলেও জাতীয় দলে এসে ১০/১৫ রান করতে পারে না অনেক ব্যাটসম্যান। তবে বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ তারকা ক্রিকটারই চারদিনের ক্রিকেট খেলেন না। সাকিব তার ১৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৯২টি। সাকিব ছাড়া সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিম ইকবাল ৮৮, মুশফিকুর রহীম ১০৮, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১০৬ ম্যাচ খেলেছেন। তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততার কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাদের খেলা হয় না।
তবে এটাও ঠিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকলে বেশিরভাগ সময় বিশ্রামের জন্য মাঠের বাইরে থাকেন তারা। আগামী ৮ই অক্টোবর থেকে এনসিএলের এবারের আসর শুরুর কথা রয়েছে। তবে সাকিব সিপিএল খেলে বিশ্রাম নেবেন। অন্যদিকে তরুণদের মধ্যে অনেকে চার দিনের ক্রিকেট খেলতে চান না বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্রিকেটবোদ্ধা, বিশ্লেষক ও কোচদের মতামত হলো ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে সেখানে জাতীয় দলের নামিদামি ক্রিকেটারদের নিয়মিত খেলতে হবে। উইকেট ও মাঠের সুবিধাও বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলতে হবে- দিপু রায় চৌধুরী
বিপিএলে বিদেশি নামিদামি ক্রিকেটাররা যদি না খেলে তাহলে এর মান কি ঠিক থাকবে! তেমনি সাকিব, তামিম, মুশফিকরা এখানে যত খেলবে তরুণ ক্রিকেটাররাও ততো উৎসাহ পাবে। এখানে উইকেটের মান যেমন জরুরী তেমনি জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারের খেলাও জরুরী। কারণ টেস্টে ভালো করতে হলে নিয়মিত চার দিনের ক্রিকেটে খেলতে হবে। এখানে ম্যাচ প্রাকটিসটাই ওদের ভালো খেলতে সাহায্য করবে। সেখানেই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেয়া যায়। এ ছাড়াও আমি মনে করি আমাদের যে পেসার নেই বলা হয়, সেটিও ঠিক না। আমাদের অনেক ভালো মানের পেসার আছে। কিন্তু তাদের আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো নয়ই, ঘরোয়া ক্রিকেটেও তেমন খেলার সুযোগ করে দেই না। যদি পেসারদের খেলার সুযোগ না দেই বা তাদের জন্য সেভাবে উইকেট না দেই তাহলে কিভাবে তারা শিখবে! তারাতো আত্মবিশ্বাসটাই পাবে না। আমি মনে করি ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়তে হলে বেশ কয়েকটি পেসবান্ধব উইকেটও বানাতে হবে।
সাকিব-তামিমদের কথার মূল্যায়ন হবে- মিজানুর রহমান বাবুল
আমরা যখন টেস্টে খারাপ করি তখনই প্রথম শ্রেণিতে ভালো করার কথা বলি। আসলে এটি সারা বছরের পরিকল্পনায় থাকতে হবে। যেমন ভেন্যু ও উইকেট গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলাও প্রয়োজন। কারণ সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহরা যদি এখানে খেলে তাহলে তরুণ ক্রিকেটাররা উৎসাহ পাবে। আবার ওদের খেলার কারণে উইকেট, আম্পায়ারিং বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধান হবে। কারণ ওদের কথার যে মূল্য তা একটি তরুণ বা সাধারণ ক্রিকেটারের কথায় হবে না। লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মেহেদী হামান মিরাজদেরও নিয়মিত খেলতে হবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। এখানে বিপিএলকে দেখেন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বড় বড় তারকারা খেলে তাই তার মানটাও ভালো। ঠিক সেইভাবে সুযোগ থাকলে দেশের যত তারকা ক্রিকেটার আছে বিশেষ করে জাতীয় দলের, তাদের অবশ্য এনসিএল ও বিসিএলে খেলা উচিত। আরেকটা বিষয় হলো যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যালেঞ্জ নিতে হয় অবশ্যই পেসারদের উন্নতি করতে হবে। তার জন্য উইকেটও আমাদের তেমন করতে হবে। পাশের দেশ ভারত এক সময় ব্যাটিং ও স্পিন দিয়ে লড়াই করতো। এখন পেস বিভাগটা তাদের দারুণ হয়েছে বলে যে কোনো জায়গাতে ডমিনেট করে ক্রিকেট খেলে। ওরাও ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেট পেসবান্ধব করেই এই জায়গাতে উন্নতি করেছে। আর ফিটনেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে বিপি টেস্টে মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। এতে করে ক্রিকেটাররা সচেতন থাকবে সারা বছরই।
ওরাই হবে তরুণদের অনুপ্রেরণা- তালহা জুবায়ের
আমি মনে প্রাণে চাই জাতীয় দলের সব ক্রিকেটার চার দিনের ক্রিকেটে খেলুক। তাহলে এর মানটাই বেড়ে যাবে। সাকিব, মুশফিকরা যদি খেলে তাহলে আলাদা গুরুত্ব থাকবে সবার মধ্যে। বিশেষ করে ওরা দেশের তরুণদের জন্য বড় উৎসাহের কারণ হবে। ধরেন, একজন তরুণ ক্রিকেটার সাকিবের দলের বিপক্ষে খেলে সেঞ্চুরি করলো তাহলে তার বিশ্বাসটাও বেড়ে যাবে দারুণভাবে। আবার মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, তামিমদের বল করে আউট করলো কোনো বোলার। তারও কিন্তু উৎসাহ, বিশ্বাস বাড়বে। তরুণরা ওদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করে অনেক শিখতে পারবে।