বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘তরুণ শিক্ষকরাই এ পেশার ভবিষ্যৎ।’ ১৯৯৪ সাল থেকে ৫ই অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ আফসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগরদের রাজনীতি মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, প্রাইমারিতে থাকা অবস্থায় একজন শিক্ষক বেশ প্রভাবমুক্ত থাকেন। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে কিছুটা বিছিন্ন হয়ে পড়েন। কলেজেও তাই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতি করেই উপরে উঠছেন।
এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক প্রভাবে আবদ্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরেন, আমরা গর্ব করি বিভিন্ন আন্দোলনের। কিন্তু সকল আন্দোলনই ছিলো রাজনৈতিক আন্দোলন। তারা কেউ শিক্ষায় এগিয়ে যাবার কথা বলছেন না। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য অতি সত্তর রাজনৈতিক প্রলয়ের বাইরে গিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া অতি জরুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, আমাদের শিক্ষকরা আমাদের কাছে যতটুকু সম্মানের ছিলেন এখন আর সে অবস্থানে নেই। এখন কিছুটা ব্যবসায়ীক মনোভাব চলে এসেছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দীন। এছাড়াও আন্দোলন চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবার বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে সমালোচনার মুখে পড়ছেন শিক্ষকরা। এ প্রসঙ্গে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের শিক্ষক সমাজ এখনও গর্বের স্থানে রয়েছে। তবে গুটি কয়েক শিক্ষকের কারণে এই অবস্থানটা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে স্বজন প্রীতি, দুর্নীতির চিত্র। আমি আশাবাদী এবারের প্রতিপাদ্যের আলোকে তরুনরাই এটি রুখে দাঁড়াবেন। আর শিশুরা শিক্ষকের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এটিও অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, গুটি কয়েক শিক্ষকের জন্য শিক্ষকদের যে অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি দুর করতে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষকদেরকেই।
আরেক শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, শিক্ষকতা একটি পবিত্র পেশা। আমাদের প্রাথমিক পর্যায় থেকে এটি চলে আসছে। আমাদের সিলেবাস, কাঠামো , শিক্ষকদের আচরণ কোনটাই ঠিক নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থার অবনতি হয়েছে সরকারের কারণে। সরকারের ছাত্র সংগঠনগুলো বলয় তৈরি করে রাখতে চায় বলেই এই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে আমি আশাবাদী একদিন রাজনীতি উন্নত হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো গতিশীল হবে।