বিপিএল’র কোনো আসরেই শিরোপার স্বাদ পাননি মুশফিকুর রহীম। দেশসেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের সামনে এবার সেই সুযোগ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের সপ্তম আসরে তার দল খুলনা টাইগার্স উঠেছে ফাইনালে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা ৭টায় খুলনার প্রতিপক্ষ রাজশাহী রয়্যালস। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটার আন্দ্রে রাসেল। এখন অপেক্ষা বঙ্গবন্ধু বিপিএল-এ শেষ হাসি কার! বিপিএল-এ কখনোই শিরোপার স্বাদ পায়নি খুলনা-রাজশাহী। বিপিএল’র চতুর্থ আসরে রাজশাহী কিংস একবার ফাইনাল খেলেছিল। সেবার ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হার দেখে রাজশাহী।
ফাইনালের আগে খুলনার অধিনায়ক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দলের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটান অনুশীলনে। আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শক্তিশালী দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে রয়্যালস। বড় অবদান ছিল অধিনায়ক রাসেলের। ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং দানবকে নিয়ে অবশ্য আলাদা করে ছক কষছেন না খুলনার প্রধান কোচ জেমস ফস্টার। তার পরিকল্পনা গোটা রয়্যালসকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার জন্যই পরিকল্পনা করে থাকি। দলে থাকা ১১ জন খেলোয়াড়ের জন্যই। প্রতিটা ম্যাচের আগেই আমরা এটা করে থাকি।’
অন্যদিকে রাসেল শেষ ম্যাচটা রাঙিয়ে তুলতে চাইছেন ফাইনাল জিতে। গোটা বিপিএলে ক্যারিবিয়ানের ব্যাটে ফিফটি ছিল না। কিন্তু ফাইনালের আগের ম্যাচে ঠিকই তিনি জ্বলে ওঠেন। খুলনার বিপক্ষে রাসেল যখন উইকেটে নামেন, তখন ১৩.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৮০ রান তুলে ধুঁকছে রাজশাহী। সতীর্থরা ছিলেন উইকেট বিসর্জনের মিছিলে। এক পর্যায়ে ৩১ বলে তাদের দরকার ছিল ৮২ রান। তখন এক প্রান্তে ঝড় তোলেন রাসেল। ২২ বলের ইনিংসে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালান তিনি। ৪ বল বাকি থাকতেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রাসেল। ৭টি বিশাল ছক্কায় করেন অপরাজিত ৫৪ রান। আর গতকাল নিজেদের ফেভারিট ভাবছেন কিনা তা নিয়ে রাসেল বলেন, ‘এটা খুবই অদ্ভুত প্রশ্ন, কারণ ফাইনালে আপনি শুধু জয়ের আশাই করতে পারেন। জেতার বাইরে আর কোনো কিছুই আমাদের মনে নেই। আমরা গত রাতে (বুধবার) দলগতভাবে খেলেছি। আমরা দেখিয়েছি যে আমরা পারি এবং আশা করি আগামীকাল রাতেও (আজ) আমরা পারবো।’
আজ ফাইনালে মুশফিক নাকি আন্দ্রে রাসেল- কে হাসবেন শিরোপা হাতে, যে দলই জিতুক, বিপিএল পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। ২০১২তে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। পরের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন তারা। তৃতীয় আসরের শিরোপা কুড়ায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চতুর্থ আসরে আবার ঢাকা, সেবার ঢাকা ডায়নামাইটস নামে। পঞ্চমবার রংপুর রাইডার্স আর গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
খুলনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলাদা করে ভাবছেন না রাসেল। তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমরা নির্দিষ্ট কোনো একজন খেলোয়াড়ের দিকে লক্ষ্য রাখছি না। আমরা শুধু তাকিয়ে আছি মাঠে নেমে উইকেটগুলো নিতে। আপনি কখনোই জানেন না আগামীকাল কে এটা (চ্যালেঞ্জ) হতে যাচ্ছে। যদি এটা তাদের দিন হয়, কোনোভাবেই আপনি তাদের রুখতে পারবেন না। তাদের অনেক ম্যাচজয়ী খেলোয়াড় আছে এবং আমরা অবশ্যই দুয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়ে পরিকল্পনা করতে যাচ্ছি না। আমরা ব্যাটিং-বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই পুরো দলটিকে নিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। আমরা সঠিক পরিকল্পনা করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে চাই।’
খুলনার মূল ভরসা মুশফিকুর রহীম। ব্যাট হাতে ১৩ ম্যাচে ৪৭০ রান করে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন খুলনার অধিনায়ক। ফিফটি হাঁকিয়েছেন ৪টি, যেখানে তার ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৯৮ এবং ৯৬ রানের ইনিংস। এছাড়াও তার পরেই আছেন দলে তরুণ ভরসা নাজমুল হোসেন শান্ত। আসরে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব শান্তর। বল হাতে ভরসা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির, শফিউল ইসলাম ও শহিদুল। গতকাল অনুশীলনে পেসারদের কোচের দায়িত্বটা পালন করতে দেখা যায় মোহাম্মদ আমিরকে। আসরে আমিরের শিকার ১৮ উইকেট। খুলনার প্রোটিয়া পেসার রবি ফ্রাইলিংকের ঝুলিতে রয়েছে ১৯ উইকেট। রাজশাহীতে পাকিস্তানি তারকা শোয়েব মালিক ৪৪৬, লিটন কুমার দাসের ৪৩০ ও তরুণ তারকা আফিফ হোসেনের সংগ্রহ ৩৬০ রান। বল হাতে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফানের শিকার ১২ উইকেট।