সৌদি আরবের রিয়াদে একটি সোফা ফ্যাক্টরিতে গত ১২ মে রাতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত কুমিল্লার চার শ্রমিকের লাশ শনিবার কুমিল্লার হোমনা ও তিতাস উপজেলার নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন হয়েছে।
নিহতরা হলেন- তিতাস উপজেলার দুলারামপুর গ্রামের হাজী রুস্তম আলীর ছেলে মো. শাহ জালাল (৩৬), কালিপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. শাহ আলম (৩৬), হোমনা উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের রমজান আলী ব্যাপারীর ছেলে মো. সেলিম (৩৫) ও কলাগাছিয়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে মো. মতিউর রহমান (৩৩)।
সকাল ১০টায় তিতাসের দুলারামপুর গ্রামের বালুর মাঠে মো. শাহ জালাল ও একই সময়ে কালিপুর গ্রামের মো. শাহ আলমের বাড়িতে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে সকাল ১০টায় হোমনার কলাগাছিয়া ঈদগাহ মাঠে মতিউরের এবং সকাল ১১টায় চান্দেরচর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সেলিমের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় চার জনের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই- বোন ও প্রতিবেশীসহ পুরো এলাকাবাসীর কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। এ সময় নিহতদের বাড়িতে পাশের গ্রামের শত শত লোক ভিড় জমায়।
নিহতদের পরিবারের সূত্র জানান, দেশে আসা লাশগুলোর বেশিরভাগ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের পাঠানো অর্থে এদের সবার সংসার চলতো। এদের কেউ গিয়েছিলেন চড়া সুদে টাকা ধার করে। একদিকে স্বজন হারানোর শোক অন্যদিকে দেনায় জর্জরিত হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাদের স্বজনরা।
মো. শাহ আলমের কফিন জড়িয়ে আহাজারি করছেন বৃদ্ধ বাবা হাবিবুর রহমান। কারো সান্তনা তাকে শান্ত করতে পারছে না। পাঁচ লাখ টাকা সুদে নিয়ে দু’বছর আগে ছেলে শাহ আলমকে সৌদি পাঠিয়েছিলেন। শাহ আলমের স্ত্রী রুমি আক্তারের হাতের মেহেদির রঙ এখনও শুকায়নি। মাত্র দু’মাস আগে বিয়ে হয়েছিল তাদের। শোকে পাথর হয়ে গেছেন রুমি আক্তার।
এদিকে ছেলের কফিন জড়িয়ে কাঁদছিলেন মতিউর রহমানের বৃদ্ধ বাবা আবদুল করিম। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার সব শেষ হইয়া গেছে। আমি কারে নিয়া বাঁচমু।”
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত জালালউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা বেগম (২২) জানান, জালাল বলেছিলেন কিছুদিন পরেই ছুটি নিয়ে দেশে আসছেন তিনি। কিন্তু সে একেবারে জীবন থেকেই ছুটি নিয়ে এসেছে।
হোমনা উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার স্বজনরাও শোকহাত। পরিবারে তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তৃতীয় সেলিমের নুসরাত (৬) ও জিহাদ (১) নামের দু’টি সন্তান রয়েছে।
সেলিমের চাচাতো ভাই ওমর ফারুক বলেন, “সেলিমের পরিবারের সামনের দিনগুলো নিয়ে সবাই অনিশ্চয়তায় রয়েছে।