2০০ রানের এভারেস্টসম টার্গেট। অথচ ব্যাট করতে নেমে ৩ বল হাতে থাকতেই জয় পেল কলকাতা। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো শিরোপা সাকিবদের কলকাতার। শেষ ওভারে ৫ রান দরকার ছিলো। সুনিল নারায়ণ ১ রান নিয়ে ব্যাটিং দেন পিযুষ চাওলাকে। তিনি শেষ ওভারের ৩ নম্বর বলে চার মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। গ্যালারি রাঙিয়ে সেটি হয়ে উঠে আতশবাজির যথার্থ এক উপলক্ষ্য। কলকাতার কর্ণধার শাহরুখ তখন আকাশে উড়ছেন। বিজয়ী দলের খেলোয়াড়রা ছুটছেন মাঠে। ম্যাচ শেষে সাকিব তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই অর্জন সবার এক হয়ে খেলার কারণেই সম্ভব হয়েছে।
২০১২ সালে আইপিএলের ফাইনালে আগে ব্যাট করে ১৯০ তুলেছিল চেন্নাই। সেবার সেই চ্যালেঞ্জিং স্কোর শেষ অবধি টপকে গিয়েছিল কলকাতা। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সাকিবদের কলকাতার বিপক্ষে পাঞ্জাব প্রথমে ব্যাট করে তুলল ১৯৯। চলতি আইপিএলে টানা আট ম্যাচ জয়ী কলকাতাকে আজও আটকানো গেল না, ৭ উইকেট হারিয়ে টপকে গেল গৌতম গম্ভীরের দল। অতঃপর প্রীতি জিনতার পাঞ্জাবকে ৩ উইকেটে হারিয়ে (আসলে পড়ুন কাঁদিয়ে) তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের হাসি হাসল শাহরুখের কলকাতাই।
আইপিএলের সপ্তম আসরের ফাইনালে ব্যাঙ্গালুরুর চেন্বাস্বামী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব।এটিকে অনেকে বলিউড মুভি 'বীর-জারা'র লড়াই নাম দিয়েছিল। বীরের জয় হলো, জারা যারপর নাই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েও পরাজয় বরণ করে নিল।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল কলকাতাই। পাঞ্জাবকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানিয়েছিল কলকাতার অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর।
২০০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই আইপিএল সাতে কলকাতার সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পা মাত্র ৫ রানে ফিরে গেলেও এরপর দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান মানিশ পান্ডে। এ ডানহাতির ৫০ বলে ধুন্ধুমার ৯৪ কলকাতার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে শেষ পর্যন্ত। শেষ দিকে পিযুষ চাওলার দারুণ ফিনিশিংয়ে শিরোপা জয়ের হাসি ফুটে ওঠে কলকাতার সমর্থকদের মুখে। ব্যাট হাতে অবশ্য সাকিব আল হাসান খুব একটা সফল হতে পারেননি এদিন। রান আউটে কাটা পড়ার আগে করেছেন ১২। দুর্ভাগ্য না ঘটলে সাকিবের ব্যাটও জ্বলসে উঠার জন্য উদগ্রীব ছিল। মাত্র ৭ বল খেলে উইলোর জোরটা এদিনও দেখাতে শুরু করেছিলেন তিনি।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা পাঞ্জাবকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেন মূলত ঋদ্ধিমান সাহা। কলকাতার সাবেক এ ব্যাটসম্যান করেন ৫৫ বলে অপরাজিত ১১৫। ঋদ্ধিমানকে যথার্থ সহায়তা করেন মনন বোরা (৬৭)। এ দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৭২ বলে ১২৯। নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঞ্জাবের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৯৯।
কলকাতার বোলার মধ্যে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন নারাইন। বল হাতে সাকিব আজ উইকেট না পেলেও ইকোনমি রেটে দলের অন্যান্য বোলারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেন। বাংলাদেশের অলরাউন্ডার ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৬ রান।
পাঞ্জাবের হয়ে ব্যাটিংয়ের সূচনা করতে এসেছিলেন গত ম্যাচের শতক হাঁকানো বীরেন্দর শেবাগ ও মানান ভোরা। উমেশ যাদবের বলে গম্ভীরের তালুবন্দি হয়ে ৭ রানে সাজঘরে ফেরেন শেবাগ। প্রথম উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ২৩ রানে।
তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন জর্জ বেইলি। সুনীল নারাইনের করা প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফিরেন তিনি। পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল দুই উইকেটে ৩২ রান।
সাকিবের করা চার ওভারে পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানরা করে মাত্র ২৬ রান। ৮ ওভারে দলীয় অর্ধশত হয় পাঞ্জাবের। আর দলীয় শতক আসে মাত্র ৫৯ বলে।
২৯ বলে তিনটি চার আর চারটি ছয়ে শাহা তার অর্ধশত করেন। আর ভোরা চারটি চার আর একটি ছয়ে ৪২ বলে অর্ধশত করেন। বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তাদের জুটি হয় ১২৯ রানের।
ভোরা ৫২ বলে ছয়টি চার আর দুটি ছয়ে চাওলার বলে তার হাতেই বন্দি হওয়ার আগে করেন ৬৭ রান। পাঁচ নম্বরে নামা ম্যাক্সওয়েল শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন। তবে অসাধারণ ব্যাটিং ঝলক দেখিয়েছেন চার নম্বরে নামা শাহা। ৪৯ বল থেকেই তুলে নেন নিজের শতক। দশটি চার ও আটটি চারে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন শাহা।