বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের তুলনায় ঋণ প্রদান কমেছে। চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে ঋণ-আমানতের এ অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৭০.৬৬%, যা আগে ছিল ৭০.৩৫%। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই বছরে আমানতের তুলনায় ব্যাংকগুলো বেশি পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে থাকলেও বর্তমানে এর বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে। ফলে দেশ এখন অনেকটা বিনিয়োগশূন্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলো নতুন বিনিয়োগে অর্থায়ন করতে পারছে না। এতে ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ তারল্য থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) কমে গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট ছয় লাখ ৪১ হাজার ২৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকা আমানত রয়েছে। এ সময়ে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে চার লাখ ৭০ হাজার ৮৮৬ কোটি আট লাখ টাকা। ঋণ ও আমানতের গড় অনুপাত (এডিআর) দাঁড়িয়েছে ৭০.৬৬%, যা আগে ছিল ৭০.৩৫%। এ সময় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গড় আমানত বেড়েছে ১৬.৫০%। আর ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৩২%। সে হিসাবে আমানতের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় এ সময়ে রাষ্ট্রীয়, বেসরকারি এবং বিদেশী খাতের ১৯টি ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। হিসাবে দেখা যায়, এ সময়ে রাষ্ট্রীয় খাতের ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় ঋণ বিতরণ (-) ৪.৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আর আমানতে গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফলে ঋণ-আমানতের গড় অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫৬.৭৬%, যা আগে ছিল ৫৫.৭০%। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ২৫.১৯% আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ১৪.৫২%। এসব ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৭৯.১১%। আগে যা ছিল ৭৭.৬৩%। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১৭.০৩% আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছে ১২.৯২%। তাদের এডিআর রয়েছে ৭৬.৫৩%। আগের মাসে যা ছিল ৭৬.৬১ শতাংশে। বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোতে ১৬.০৫% আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৭.৯০%। তাদের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৭০.১৯%। আগের মাসে এডিআর ছিল ৬৯.৯৪%। ইসলামী ব্যাংকগুলোর গড় ঋণ বিতরণ ১৩.৫৬% দাঁড়িয়েছে। আর আমানতে গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২১.২১%। ফলে ঋণ-আমানতের গড় অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৮১.৮৩%, যা আগে ছিল ৮২.১৪%। ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো মোট আমানতের ৮০% ঋণ বিতরণ করতে পারবে, আর ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণ বিতরণের পরিমাণ মোট আমানতের ৯০%। অর্থাৎ নন-ইসলামী ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত গ্রহণ করলে ৮০ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ৯০ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারে। এ সময় ঋণ বিতরণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দাঁড়িয়েছে দেশের রাষ্ট্রীয় খাতের তিন বাণিজ্যিক ব্যাংকের। একই সময়ের তুলনায় সোনালী ব্যাংকে ১৫.৫৯% আমানত প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণ বিতরণ কমেছে ১০.৮৩%। জনতা ব্যাংকে ১০.৭৫% আমানত বাড়লেও ঋণ কমেছে ৪.১১%। অগ্রণী ব্যাংকে ১৩.১৯% আমানত প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণ বিতরণ কমেছে ৫.৯২%। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি ৩১.৭৭% এবং ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৪.৮৩%। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, তহবিল ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের তুলনায় আমানত বাড়ানোর নজর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় ব্যাংকগুলো আমানতের টাকা বেসরকারি খাতে খাটাতে না পারায় ব্যাংকের তারল্য বেড়েছে।