মিসরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল রোববার শপথ নিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ফাত্তাহ আল-সিসি৷ তাঁর নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী গত বছর দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে৷ এরপর গত মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন সিসি৷ খবর এএফপির৷
সাংবিধানিক আদালতে গতকাল শপথ নেন সিসি৷ এরপর তিনি বিদেশি নামী অতিিথদের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ অনুষ্ঠানে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে তেমন কোনো প্রতিনিধি যোগ দেননি৷ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং এরপর বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ গতকাল শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেনাসমর্থিত বেসামরিক সরকারের নির্দেশে নিষিদ্ধ মুরসির রাজনৈতিক দল ব্রাদারহুড রাস্তায় বিক্ষোভ বা সহিংস হামলা চালাতে পারে৷
মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শপথ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়৷ শপথে সিসি বলেন, ‘মহান আল্লাহর নামে আমি শপথ করছি, প্রজাতন্ত্রব্যবস্থা সমুন্নত রাখব, সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব, জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দেব; রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব৷’
প্রেসিডেন্ট সিসি পরে কায়রোর ইত্তাহাদিয়া প্রেসিডেন্ট প্যালেসে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ িফলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, আরবের বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশা ও আফ্রিকার নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন৷
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরব বসন্তের ঢেউয়ে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাচ্যুত হন কয়েক দশকের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক৷ কিন্তু এরপর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসায় ক্ষমতা আবার চলে যায় সেনাবাহিনীর হাতে৷ একপর্যায়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী৷ ২০১২ সালের জুনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মুরসি৷ কিন্তু তাঁর গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং দেশকে তড়িঘড়ি করে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের উদ্যোগে ক্ষুব্ধ হয় দেশের মানুষ৷ মুরসিকে হটাতে আবার রাজপথে নামে মানুষ৷ শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘাত৷ একপর্যায়ে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী৷ এক বছরের মাথায় ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বন্দী হন মুরসি৷ ক্ষমতা যায় সেনাবাহিনীর হাতে, সামনে চলে আসেন সেনাপ্রধান সিসি৷
আন্দোলনকারীদের এক পক্ষ সিসিকে স্বাগত জানালেও প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুরসির ব্রাদারহুড৷ শুরু হয় ব্যাপক দমন-পীড়ন৷ সহিংসতায় নিহত হয় প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ৷ হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, বিশেষ করে ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়৷
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক বছরের মাথায় মিসরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা হলো৷ প্রথম দিকে সিসি বলেছিলেন, তিনি নির্বাচনে লড়বেন না৷ কিন্তু একপর্যায়ে ‘জনগণের চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা’র কথা বলে তিনি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন৷ এ জন্য ছেড়ে দেন সেনাপ্রধানের পদ৷ গত ২৬ থেকে ২৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি একতরফাভাবে জয়ী হন৷ ৯৭ শতাংশের মতো ভোট পান তিনি৷
সেনাপ্রধান থেকে প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া সিসির সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ৷ গত তিন বছরের রাজনৈতিক সহিংসতার পর স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করাই হবে তাঁর প্রধান দায়িত্ব৷