রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত এক পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাহায্য দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ওই নারী শ্রমিক (২০)-কে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শাহাবুদ্দিন (৫৬) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তি রানা প্লাজায় আহত আরেক নারী শ্রমিকের স্বামী। গ্রেপ্তারকৃত শাহাবুদ্দিন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার তেওতা এলাকার মৃত আবদুল মালেকের পুত্র। গতকাল ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই তরুণীকে ফোন করে শাহাবুদ্দিন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদেরকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে বলে জানায় সে। খবর শুনে ওই নারী শ্রমিক শাহাবুদ্দিনের দেয়া ঠিকানায় চলে যায়। পরে শাহাবুদ্দিন ওই তরুণীকে তার ভাড়া নেয়া ব্যাংক কলোনি মহল্লার আমীর আলীর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে রাতভর আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন শুক্রবার ভোরে ওই বাসা থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন সাভার থানায় মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই পুলিশ শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সরজমিনে ঘটনাস্থল ও ধর্ষিতার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম ও মেয়ে শারমিন রানা প্লাজার আহত শ্রমিক। ঘটনার কয়েক দিন আগ থেকেই শাহবুদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বিজিএমএ-র তত্ত্বাবধানে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার আগ থেকে তাদের মেয়ে শারমিন নানার বাড়িতে। তবে ঘটনার সময় শাহাবুদ্দিনের ১৫ বছরের ছেলে শাকিল বাসায় ছিল।
‘ধর্ষিত’ তরুণী জানায়, রাতে তাকে ওই কক্ষে আটক করে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ সময় কক্ষে শাহাবুদ্দিনের ছেলে শাকিল ঘুমিয়ে ছিল। মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় প্রাণভয়ে কোন চিৎকার করেনি সে। বাসায় যখন তারা ঢোকে তখন রাত প্রায় ১১টা। ওই সময়ে বাসার এক ব্যক্তি গেট খুলে দিয়েছে। তার আগে শাহাবুদ্দিনের দোকানে তাকে বসিয়ে রাখা হয়। তরুণী জানায়, ২৫ হাজার টাকা সাহায্য দেয়া হবে জানিয়ে তাকে শাহাবুদ্দিনের বাসা সংলগ্ন ব্যাংক কলোনি এলাকার দোকানে যেতে বললে সে সেখানে যায়। পরে রাত ১১টায় তাকে বাসায় নিয়ে যায় শাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে ধর্ষিতা তরুণীর ফুফুর সঙ্গে কথা হয় সাভারে ডগরমোড়া এলাকায়। তিনি জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টায় একটি কল আসে তার ভাইঝির (ধর্ষিতা) ফোনে। এ সময় সে জানায়, তার বান্ধবী জানিয়েছে রানা প্লাজায় আহতদের সাহায্য দেয়া হবে। পরে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টায় ফুফুকে কল করলে সে জানায়, আজ রাতে (ঘটনার দিন) বান্ধবীর বাসায় তাকে থাকতে হবে। কয়েক মিনিট পরে ফুফু তার ফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পান। পরের দিন শুক্রবারে ভোরে বাসায় এসে ধর্ষণের বিষয়টি জানায় ওই তরুণী। তবে তরুণীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা তা মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেলেই জানা যাবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহীন শেখ।
এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাহাবুদ্দিনের স্ত্রীর কাছে চাঁদা দাবি করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তারা টাকার বিনিময়ে মামলা নিষ্পত্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে।
ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লিখিত বাসাটি মূলত কলোনি এলাকার এক কক্ষের একটি বাসা। বাসায় ঘুমানোর জন্য একটি মাত্র খাট। পাশে এ রকম আরও কয়েকটি কক্ষ রয়েছে। ওই বাসার গেটটি বন্ধ করা হয় প্রতিদিন রাত ১০টার পর। ওই দিনও যথারীতি গেট বন্ধ করা হয়। শাহাবুদ্দিন ও তার ছেলে শাকিল বাসার অদূরে তাদের মুদির দোকান থেকে বাসায় ফেরে ১০টার পর। এসময় গেট খুলে দেয় বাসার তত্ত্বাবধায়ক লিটন মিয়া। শাকিল জানায়, সে ও তার বাবা প্রতি রাতের মতো সেদিনও এক সঙ্গে ঘুমিয়েছে। ওই রাতে সে তার বাবা ছাড়া বাসায় কাউকে দেখেনি। একই ভাবে আশাপাশের লোকজন জানিয়েছেন, রাতে ওই কক্ষ থেকে কোন শব্দ শোনা যায়নি। এ বিষয়ে বাসার তত্ত্বাবধায়ক লিটন মিয়ার স্ত্রী বলেন, রাতে ঘুমানোর আগে আনুমানিক ১১টার দিকে শাহাবুদ্দিনকে তিনি তার কক্ষের দরজার সামনে দেখেছেন। ওই কক্ষে অন্য কারও উপস্থিতি তারা দেখেননি। এছাড়া গেট বন্ধ রেখে একটা মেয়ের এ বাসায় আসা সম্ভব না।
শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সাহায্য হিসেবে তার মাধ্যমে ৩২টি সেলাই মেশিন দিয়েছে রাজধানীর গুলশান ২-এর একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে তিনি ও তার মেয়েও দু’টি মেশিন পেয়েছেন। তার মাধ্যমে মেশিন দেয়াকে কেন্দ্র করেই মূলত এ ঘটনা। মেশিন দেয়া হচ্ছে জেনে ধর্ষিতা হিসেবে দাবি করা ওই তরুণী ছুটে এসেছিল আমেনার কাছে। ওই সময়েই শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয়। কিন্তু সে প্রথমে একবার ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সেলাই মেশিন গ্রহণ করায় দ্বিতীয়বার তাকে আর দেয়া হয়নি। এ নিয়ে শাহাবুদ্দিনের দোকানের সামনে গত মঙ্গলবার বাক্বিত-া হয় তরুণীর। এ ঘটনার জের ধরেই ধর্ষণের অভিযোগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আমেনা।