দশম জাতীয় সংদদে সরকারী দল ও বিরোধী দলের অবস্থান নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “সংসদে সকল কার্যক্রম থাকলেও এ সংসদকে কার্যকর সংসদ বলা যায় না। বর্তমান বিরোধী দল শুধু নামে আছে। নিজেদের এক ধরনের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিরোধী দল হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে। মোট কথা বর্তমান সংসদে একটি অভূতপূর্ব অবস্থা বিরাজ করছে।”
সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ দশম জাতীয় সংসদ : প্রথম অধিবেশন’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপনকালে ড. ইফতেখারুজ্জামান এ মন্তব্য করেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নবম ও দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সঙ্গে তুলনামূলক গবেষণা দেখা যায় নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা (খালেদা জিয়া) ওই সংসদের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিতির হার ছিল মোট কার্য দিবসের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতার (রওশন এরশাদ) উপস্থিতির হার ছিল ৩৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।”
তিনি বলেন, “দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের নেতার উপস্থিতির হার কিংবা বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের হার না থাকাটা সংসদ কার্যকরের প্রধান সূচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। প্রধান বিরোধী দল সংসদ বর্জন করেনি বলে, আমরা বলতে পারি না দশম সংসদ কার্যকর রয়েছে। প্রধান বিরোধী দলের মৌলিক চরিত্রের প্রতিফলন এবং যথার্থ ভূমিকার পালনের মাধ্যমেই সংসদ কার্যকর হবে।”
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মোট ৩৬ কার্যদিবসে ১১৩ ঘণ্টা ৫১ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে। গড়ে প্রতি কার্যদিবসে তিন ঘণ্টা ৯ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো দেখানো হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও এই সংসদের প্রথম অধিবেশনে সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দলের (জাতীয় পার্টি) সদস্যদের সমালোচনার শিকার হয়েছে ৫৩১ বার। অথচ নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিএনপি বিরোধী দল থাকাকালে সমালোচনার শিকার হয় ৩৪২ বার।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোরাম সংকট (কার্যদিবসের শুরুতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংসদ সদস্য উপস্থিত না থাকা) হয়েছে মোট ১৭ ঘণ্টা ৭ মিনিট। যা গড়ে প্রতি কার্যদিবসে ২৮ মিনিট করে। প্রতিমিনিট সংসদ অধিবেশন পরিচালনার জন্য ৭৮ হাজার টাকা করে খরচ ধরলে এ অধিবেশনে অর্থ অপচয় হয়েছে ৮ কোটি এক লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে দশম জাতীয় সংসদের প্রকৃতি হিসেবে দেখানো হয়েছে, এই সংসদে মোট সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী রয়েছেন ৫৯ শতাংশ, আইনজীবী ১৩ শতাংশ, কৃষিজীবী ৫ শতাংশ এবং শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২ শতাংশ।
সংসদে নারীর ক্ষমতায়নে দেখা যায়, মোট ৬৯ জন নারী সংসদ সদস্য দশম জাতীয় সংসদের রয়েছেন যাদের মধ্যে ১৯ জন সরাসরি নির্বাচিত এবং ৫০ জন সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত। নারী সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাপকাঠিতে দেখা যায় ৪১ শতাংশ নারী সংসদ সদস্য স্নাতকোত্তর ও ৩১ শতাংশ নারী স্নাতক পর্যায় পড়ালেখা করেছেন। দশম জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিদের মধ্যে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী, ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ আইনজীবী, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ রাজনীতিক এবং ৭ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, “সংসদের মূল কাজ হলো জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করা। আর যে আইন প্রণয়ন করা হয় তা শতকরা দুই ভাগও বাস্তবায়ন হয় না। সংসদের বেশি সময় ব্যয় হয় সরকারি দলের প্রশংসায়।”