রোজার ঈদের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আবারো কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, “বর্তমান জালিম ও অত্যাচারী সরকারকে উৎখাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এই সরকারকে উৎখাত করতে ঈদের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল পূর্বানীতে জাগপা চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধানের আয়োজনে ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, “দেশ আজ মহাবিপদে ও সংকটে। দেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা ব্যস্ত লুটপাট, দুর্নীতি ও গুম, খুনে ব্যস্ত। জনগণের উন্নয়নে তাদের কোনো নজর নেই।এরফলে দেশে প্রতিদিন বেকারত্ব বাড়ছে, মানুষ কর্মহীন হচ্ছে।”
তিনি বলেন,”ঢাকাসহ আজ সারাদেশের মহাসড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। কিন্তু জবর দখলকারী সরকারের সেদিকে কোনো নজর নেই।”
রোববার রাজধানীতে ডিআরইউ সভাপতি শাহেদ চৌধুরীকে অপহরণের চেষ্টার নিন্দা জানিয়ে খালেদা বলেন, “দেশে কোনো পেশার মানুষ নিরাপদ নয়। সরকারের গুণ্ডা বাহিনী, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে তাকে (শাহেদ) গুম করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে রক্ষা করেছে।”
অভিযোগ করে তিনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে না। সেখানে থাকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী, বহিরাগতরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করা হয়েছে।”
পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ারও কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “বড় বড় কথা ও মিথ্যাচার বন্ধ করুন এবং মানুষের দাবিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিন। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।”
সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকতে গুম, খুন ও নির্যাতন করছে এমন দাবি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইলেও কোনো স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।”
আওয়ামী লীগকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, “২০ দলীয় জোট এখন জনগণের জোট। কারণ পাঁচ ভাগ মানুষ নির্বাচনে ভোট দিলেও বাকি ৯৫ ভাগ মানুষ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচনে ভোট দেয়নি।”
‘নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় এখনো মূল আসামীদের গ্রেফতার করা হয়নি’ এমন অভিযোগ করে খালেদা বলেন, “যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জামাই আদরে রাখা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের ঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আওয়ামী লীগের যেসব বড় বড় নেতা ও মন্ত্রীরা হত্যা গুমের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তাদের কথা চলে আসবে। আর সরকারের প্রধান যিনি আছেন তিনি এসব গুম, খুনের দায় এড়াতে পারবে না, কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তার অধীনে।”
আগামী দিনের আন্দোলনে জনগণের সহযোগিতা কামনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “ঈদের পর অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।”
ইফতার পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যাপক মওলানা মো. ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইব্রাহিম বীর প্রতীক, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এনডিপির চেয়ারম্যান, খন্দকার গোলাম মোর্তজা, মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মবিন, পিপলস লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি আবদাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।