বিশ্বে কোটি কোটি মুসলমান রমজান মাসে রোজা পালন করছেন। তাঁদের অনেকেরই রয়েছে নানা রোগ, সমস্যা। রোজা পালন করতে গিয়ে তাঁরা অনেক সময় সম্মুখীন হন নানা প্রশ্নের।
খালি পেটে গ্যাস্ট্রিক বাড়ে?
আমাদের ধারণা যে খালি পেটে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে। তাই পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীরা রমজান এলে উদ্বিগ্ন হন। আসলে শুধু রোজার কারণে অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বাড়ে না। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়; বরং শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তবে খেয়াল রাখুন, ইফতারে ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার যেন বেশি না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যথেষ্ট পানি ও আঁশজাতীয় খাবার রাখবেন।
হাঁপানি রোগী ইনহেলার নিতে পারবেন?
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হাঁপানি রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। ইফতার বা সেহ্রির সময় দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি নিয়ন্ত্রক বড়ি খেয়ে নিতে পারেন। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, দিনের বেলায় শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার নেওয়া যাবে। তাতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
পানি না খেলে কিডনি জটিলতা বেড়ে যাবে?
যাঁরা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, তাঁদের পক্ষে রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি অকার্যকারিতার রোগীরা সতর্কতার সঙ্গে রোজা রাখতে পারেন। কিডনি রোগীদের বেশি করে পানি খেতে হয় এমন ধারণাও ঠিক নয়, বরং তাঁদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পরিমাপ করে খেতে বলা হয়। কিডনি রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কখন খাবেন?
যাঁরা কেবল এক বেলা বা দুই বেলা ওষুধ খান, তাঁদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেবল চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জেনে নিন কোনটা সন্ধ্যায় খাবেন, আর কোনটা শেষ রাতে। যাঁরা এর চেয়ে বেশিবার খান তাঁরা অবশ্যই নতুন সময়সূচি জেনে নিন। এ সময় ইফতারে কাঁচা ছোলা, সালাদ ইত্যাদিতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হয়ে যাচ্ছে কি না লক্ষ রাখুন। বাড়তি লবণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
হৃদরোগ আছে?
হৃদ্রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই। তবে সম্প্রতি হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিউর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত তেলযুক্ত ইফতারি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। খাদ্যাভ্যাসে অসংযমী হয়ে অনেকেই এ সময় রক্তে শর্করা ও চর্বি দুই-ই বাড়িয়ে ফেলেন। অনেকে বলেন, রোজার মাসে একটু বেশি খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। এসব ধারণা ভ্রান্ত। খাদ্যাভ্যাসেও সংযম পালন করুন। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, বুকে ব্যথা হলে জিহ্বার নিচে স্প্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে রোজা রেখেও।
জন্ডিস ও যকৃতের সমস্যা
জন্ডিস বা ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর পথ্য গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদি যকৃতের রোগীদের জন্যও রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। পিত্তথলিতে পাথর বা অন্যান্য সমস্যা তেলচর্বি ভাজাপোড়া খেলে বেড়ে যেতে পারে। যকৃতের সমস্যায় পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই রোজা করা উচিত।
চোখ-কান বা নাকে ড্রপ ব্যবহার
চোখ বা নাকে ড্রপ দিলে তা মুখে চলে যেতে পারে, তা ফেলে দিয়ে কুলি করে ফেলা যায়। ফলে ওষুধ গলায় বা পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। একটু সাবধানতা অবলম্বন করে রোজা রেখে অনায়াসে চোখে, নাকে বা কানে ড্রপ দেওয়া যায়।
মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ|