সুবল চন্দ্র দাস (কটিয়াদী) কিশোরগঞ্জ থেকে ঃ
দেশে মাছের জেলা হিসেবে সুপরিচিত কিশোরগঞ্জের হাটবাজারে মাছ নেই। আকাল পড়েছে মাছের বাজারে। মাছের স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় মাছের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তাতে সাধারণ আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। গত বছর বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ নদ-নদীসহ হাওরে স্বাভাবিক পানি ছিল না। এতে মাছের প্রজনন এবং বিচরণ ক্ষেত্র কমে গেছে। এ বছর নদী-নালা ও হাওরে মাছের উৎপাদন কম হওয়াই মূল্যবৃদ্ধির কারণ বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোকসংখ্যা ও ক্রেতার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহ নেই। মাছের মৌসুমেও বাজারে মাছ নেই। এতে মাছের দাম এক মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২০টি ৩০০ টাকার কই মাছ ৬০০ টাকায়, ১৫০ টাকার ২০টি মাঝারি শিং-মাগুর ৫০০ টাকায়, ৩০০ টাকার বোয়াল ৬০০ টাকায়, ৩০০ টাকার রুই-কাতলা ৫০০-৬০০ টাকায়, ২৫ টাকার ৩০-৩৫টির একভাগ পুঁটি, মলা, ঢেলা, টেংরা ও বজুরি মাছ ১০০ টাকা ভাগে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের দাম বেড়েছে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ। শহরের বাসিন্দা চাকরিজীবী নটরাজ জানান, এমনিতেই চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারপরও শহরে মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ‘কিশোরগঞ্জে মাছের দাম কম ও সহজেই পাওয়া যায়থ দীর্ঘদিনের এ সত্যটি মিথ্যা হতে চলছে। জীবনে এই প্রথম তিনদিন মাছ ছাড়া শাক-ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছি। বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রঞ্জিত পালসহ মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মাছের চাহিদার তুলনায় জোগান একদম কমে গেছে। কিশোরগঞ্জে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত নদ-নদীতে পানি কমে যায়। ছোট ছোট মাছের ঘেরগুলো শুকিয়ে যায়। পানি সেচে নদ-নদী ও ঘেরগুলো থেকে আনা দেশি প্রজাতির টাটকা মাছে বাজার ছেয়ে যেত। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। গত বছর প্রত্যাশিত পানি না আসায় মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এদিকে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বিস্তীর্ণ হাওরের ভাসমান পানিতে মাছ শিকারিদের মাছ ধরার কথা। কিন্তু এখন হাওরে মোটামুটি পানি এলেও পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় জোগান কমে গেছে। তাই মাছের দাম এ বছর প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাছের খামারি পারভেজ জানান, বাজারে মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য খামারিরা বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। তবে সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষ ভালো নেই। মৎস্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আলী আজহার জানান, গত বছর হাওরে স্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি না হওয়ায় এবং জেলার নদীগুলো ভরাট হয়ে পড়ায় মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র দুটিই কমে যায়। ফলে তুলনামূলকভাবে মাছের বংশবৃদ্ধি হয়নি। উৎপাদন তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়েছে।