কানিজ সুবর্ণা, মেহরীন, তিশমা, মিলাদের মতো জনপ্রিয় পপকন্যাদের পদচারণায় এক সময় মুখর ছিল সংগীতাঙ্গন। শূন্য দশকের শুরুতে কানিজ সুবর্ণার কণ্ঠে একাধিক গান জনপ্রিয়তার মুখ দেখে। শুধু গানই নয়, তার অসাধারণ পারফরমেন্সও মুগ্ধ করে শ্রোতা-দর্শকদের। গানের বাইরেও মিউজিক ভিডিওর ক্ষেত্রেও বেশ যত্নবান দেখা গেছে এই তারকাকে। আর তাই তার একাধিক মিউজিক ভিডিও প্রশংসিত হয় দর্শক মহলে। কানিজ সুবর্ণার পাশাপাশি সেই সময় মেহরীনের কণ্ঠে পপগানও নতুন এক ধারা সৃষ্টি করে। পর পর তার গাওয়া একাধিক পপ গান অডিও-ভিডিওতে দর্শকপ্রিয়তা পায়। ভিন্নধর্মী কথা, সুর, সংগীত ও গায়কী দিয়ে নিজের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তিনি গড়ে তোলেন। মূলত কানিজ সুবর্ণা ও মেহরীনের হাত ধরেই শূন্য দশকের শুরু থেকে নারীকণ্ঠে পপ গান আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। শুধু তাই নয়, গানের মাধ্যমে অডিও ইন্ডাস্ট্রির চাকা গতিশীল রাখতেও তাদের অ্যালবাম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কানিজ ও মেহরীনের একাধিক অ্যালবাম এখন পর্যন্ত ব্যবসা সফলতার মুখ দেখেছে। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও তাদের ভিন্নধর্মী গান ব্যাপক সাড়া ফেলে। যার সুবাদে একাধিকবার তারা প্রবাসীদের আমন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নিজেদের অসাধারণ পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। শুধু গায়িকা হিসেবেই নয়, পরিপূর্ণ পারফরমার হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। পপ গানের এই দুই নারী কাণ্ডারির পর পরই অন্যরকমের আবেদন নিয়ে সংগীত জগতে আবির্ভাব ঘটে তিশমার। কানিজ ও মেহরীন ঘরানার বাইরে গিয়ে পপ জগতে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান খুব অল্প সময়ে গড়েন এই গ্ল্যামারাস গায়িকা। পারফরমার হিসেবেও দারুণ গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেন তিনি। পর পর তিশমার একাধিক অ্যালবাম ভাল ব্যবসা সফলতা পায়। কিন্তু পরবর্তীতে অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা দিন দিন খারাপের পথে যাওয়ার কারণে কাজ একদমই কমিয়ে দেন কানিজ, মেহরীন ও তিশমা। ঠিক এ সময়ে সংগীত জগতে ঝড় তুলেই যেন আবির্ভাব ঘটে পপকন্যা মিলার। ২০০৬ সালে তার প্রকাশিত প্রথম একক অ্যালবাম ‘ফেলে আসা’ ব্যাপক ব্যবসা সফলতা পায়। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে মিলার ‘চ্যাপ্টার টু’ এবং ‘রি-ডিফাইন্ড’ অ্যালবাম দুটিও অডিও ইন্ডাস্ট্রির ধীরগতির চাকাকে সচল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নতুন ঘরানার পপগানের সূত্রপাতের মাধ্যমে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন দিনের সূচনা করেন এ গায়িকা। স্টেজ পারফরমার হিসেবেও তাকে বরাবরই নাম্বার ওয়ান বলা হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, কোন এক অজানা রহস্যময় কারণে মিলা ৫ বছর ধরে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে একরকম অনুপস্থিত। তিশমা কেবলমাত্র অনলাইনে গান প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছেন। অন্যদিকে কানিজ সুবর্ণা মিডিয়া থেকে অনেকটাই দূরে। আর মেহরীন বাংলাদেশী আইডলের বিচারক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করলেও গানে-অ্যালবামে আপাতত নেই। এই হলো পপগানের (নারীদের) চার নারীশিল্পীর বর্তমান অবস্থা। তবে এই চার তারকার ভক্তদের নিরাশ হওয়ার আর কারণ নেই। কারণ, এই চার পপকন্যার সংগীতাঙ্গনে পুরোদমে ফেরার ইঙ্গিত মিলেছে সমপ্রতি। এটি অডিও ইন্ডাস্ট্রির জন্যও বেশ সুখবরই বটে। কানিজ সুবর্ণা ঠিক করেছেন নতুন একটি অ্যালবাম গোছানোর। ধীরগতিতে খুব ভালভাবে নিজের এই অ্যালবামটি করতে চান তিনি। মেহরীন নিজের একক অ্যালবামের কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন শিগগিরই। চলতি বছরের শেষে কিংবা নতুন বছরের শুরুতেই নিজের নতুন অ্যালবাম শ্রোতাদের হাতে তুলে দিতে চান তিনি। এ বিষয়ে মেহরীনের ভাষ্য, অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভাল হবে সেই স্বপ্ন তো আমরা দেখতেই পারি। তবে আমি আপাতত আমার ভক্ত-শ্রোতাদের নিয়ে ভাবতে চাই। তাদের অনেক অনুরোধ, অভিযোগ, অভিমান জমা হয়ে আছে নতুন গান নিয়ে। এগুলো সব দূর করতে চাই নতুন অ্যালবামের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে তিশমা এতদিন অনলাইনে গান প্রকাশ সীমাবদ্ধ রাখলেও শিগগিরই বেশ কিছু চমক নিয়ে হাজির হচ্ছেন। অন্তত একটি অডিও অ্যালবাম ও একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও অ্যালবাম চলতি বছরই ফিজিক্যালি প্রকাশ করতে যাচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে অডিও অঙ্গনের খারাপ অবস্থার কারণেই অ্যালবাম প্রকাশ করিনি। অনেক কোম্পানি থেকেই প্রস্তাব রয়েছে অ্যালবাম প্রকাশের। তবে আমি আমার নিজের কোম্পানি থেকেই অ্যালবাম প্রকাশ করবো। হতে পারে সেটা কোরবানির ঈদেও। এদিকে পপ গানের সর্বশেষ নারী তারকা মিলা এরই মধ্যে নিজের নতুন অ্যালবামের কাজ শেষ করেছেন। এটি ফিজিক্যালি বেশ বড় আয়োজনের মধ্য দিয়েই কোরবানির ঈদে প্রকাশের কথা মোটামুটি পাকাপাকি। সব মিলিয়ে চার পপকন্যার পুরোদমে ফেরার বার্তা অডিও অঙ্গনে বেশ আশার সঞ্চার করেছে। এদের মাধ্যমে আবারও কিছুটা হলেও অডিও ইন্ডাস্ট্রির চাকা গতিশীল হবে- এমনটাই আশা করছেন সংগীত-বোদ্ধারা।