কমন ওয়েলথভূক্ত দেশগুলোর টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত সর্বোচ্চসংস্থা কমনওয়েলথ টেলিযোগাযোগ অর্গানাইজেশানের ২০১৪ সনের তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক ফোরাম ৮-১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুরে র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে শেষ হলো।
বাংলাদেশে এই প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত ফোরামে কমনওয়েলথভূক্ত প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে ঐক্য মত হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ভাগ্যোন্নয়নে এই প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও দক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সর্বোৎকৃষ্ট চর্চা (Best Practices) ও জ্ঞান বিনিময়ে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছেন ফোরামের সদস্যগণ।এবারের ফোরামের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলঃ ICT 4D: Access to Inclusive and Innovative Services । যার মূল ফোকাস হচ্ছে মানুষে রক্ষমতায়ন, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কাছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পৌছানো। টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির সামগ্রিক ও উদ্ভাবনী সেবায় সাধারণ মানুষের সহজ প্রবেশাধিকার। গত তিনদিনের সেশনে এই খাতে বর্তমান ও আশুচ্যালেঞ্জসমূহ, সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করার পাশাপাশিতা অতিক্রমের উপায় বের করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
তিনদিনব্যাপী ফোরামের বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় ব্রড ব্যান্ড সুবিধার প্রসারে সহজলভ্যতা, অবকাঠামো ব্যবস্থার অংশীদারিত্ব, মোবাইল বাণিজ্য ও ই-কমার্স, মূল্য সংযোজন সেবা, শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয়, কর্মে অক্ষম মানুষের জন্য মোবাইল সুবিধার অগ্রাধিকার, বিশ্বজনীন সার্ভিসফান্ডের ব্যবহার, টুজি ও থ্রিজি প্রযুক্তির মাইগ্রেশনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, বিগডাটা, ক্লাউড কম্পিটিং, ক্লাউড ভিত্তিক বিজনেস প্রসেস আউট সোর্সিং-এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়াদি অগ্রাধিকার লাভ করেছে।এবারের ফোরামে সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা, শিশু ও নারীদেরঅধিকার ও মর্যাদাসুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামের যুবসমাজ ও পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠিকে আইসিটি সুবিধা প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।গত তিনদিনের সুপারিশ, বিশেষজ্ঞ মতামত ও উদ্ভাবনীভাবনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চলার পথকে অনেক মসৃণ করবে বলে আশা করা যায়।বাংলাদেশকে ITU-এরকাউন্সিলসদস্য পদে পুনঃ নির্বাচনে এই ফোরাম সমর্থন যোগাবে, সহায়তা করবে বলে আশা করা হয়।
এবারের ফোরামে ২১টি প্রেজেন্টেশান, ১টি ওয়ার্কশপ ও ৯টি প্যানেলআলোচনাঅনুষ্ঠিতহয়েছে। এতে ৩৮ জন বিদেশী ও ৩২ জন দেশীয়বিশেষজ্ঞ বক্তা সক্রিয় অংশ নেন। প্রায় ১১১ বিদেশীপ্রতিনিধিসহ দুশতাধিক নিবন্ধিত প্রতিনিধি ফোরামে অংশ নিয়েছেন।
কমন ওয়েলথ দেশ সমূহের সরকার, রেগুলেটর, অপারেটর, ইন্ডাস্ট্রি, সুশীল সমাজসহ সকল অংশীজন গত তিনদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ, আশুচ্যালেঞ্জ, নতুন প্রযুক্তির মাইগ্রেশান, বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সমস্যার উত্তরণ ও সাফল্য এবং টেলিযোগাযোগ খাতে সার্বিক সম্ভাবনা নিয়েনিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করেছেন।অনেক ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা(Best Practices) চিহ্নিত করতে পেরেছেন। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর মধ্য দিয়ে প্রতিটি দেশসহজে ও কম খরচে বাধা-বিঘœ হীনভাবে এগিয়ে যেতে পারে। এটা ফোরামের অন্যতম বড় প্রাপ্তি।
বিভিন্ন সেশনে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন, সিটিও সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক টিম আনউইন, গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী জনাব আব্দুললতিফ সিদ্দিকী, তথ্য মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক,গৎ. Mr. Kondwani Nankhumwa-তথ্য ,পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী, মালাবি, Mr. George William Thembo Nyombi– স্টেট মিনিস্টার , উগান্ডা, অধ্যাপক প্যাট্রিক মাকুঙ্গু, স্থায়ী সচিব, যোগাযোগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তাঞ্জানিয়া , ক্রিসসিচেরান, সিইও , টেলিকমিউনিকেশন্স অথরিটি অব ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, ফ্রান্সিস ওয়াংগুসি , মহাপরিচালক, কমিউনিকেশন্স অথরিটি অব কেনিয়া, ফ্রেডরিকমাদুরাউদ, একটিং হেড অব ডেলিগেশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন টু বাংলাদেশ, সোহাটইলর, তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা , যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, নাইজেরিয়া, ভিমালেন রেড্ডি , চেয়ারম্যান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অথরিটি অব মরিশাস, ড: ম্যারিয়ন ট্রেসকো , সাবেক মহাপরিচালক, সুইডিশডাক ও টেলিযোগাযোগ অথরিটি।বাংলাদেশ ব্যাংকেরগভর্নর ড. আতিয়ার রহমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব জনাব মোঃফয়জুর রহমান চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম খান, টেলিকম কর্তৃপক্ষ, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধান নির্বাহী ক্রিসসিচেরান, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব সুনীল কান্তি বোস, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এরিকসনের মার্কেটিং ও যোগাযোগ ইউনিট-এরভাইস-প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ভিক্লান্দ, রসেট্টা এসোসিয়েট লিঃ বাংলাদেশ-এর এমডি মেজর জেনারেল মঞ্জুরুল আলম, নাইজেরিয়া কমিউনিকেশন কমিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.ইউজিন জুয়াহ, লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান, আইরেক্স ইউএসএ এর ভইস প্রেসিডেন্ট রবার্ট ক্রনিন, টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ-এর এমডি জনাব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সোনিয়া বশির কবির, বিকাশ বাংলাদেশের সিইও কামাল কাদির, বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলামসহ আরও অনেক প্রযুক্তিবিদ।
উল্লেখ্য সিটি ও বার্ষিক ফোরাম কমন ওয়েলথভূক্ত দেশগুলোর সরকার, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, অপারেটর, ইন্ডাস্ট্রিজ তথা সকল অংশীজনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফম। এই ফোরামে মোবাইল ব্রডব্যান্ড নীতিমালা, সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন, নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক, কনটেন্ট ও এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ, আইপি টেকনোলজি, স্যাটেলাইটব্রডব্যান্ড, টেলিকম রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, শিক্ষা-যুবসমাজ ও আইসিটি ব্যবহার এবং গ্রিন টেকনোলজিসহ টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়।