পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশমান স্তরে সম্পদ লুণ্ঠন একটি স্বীকৃত সত্য। বিভিন্ন কৌশলে এই লুণ্ঠন হয়ে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলো আর্থিক খাতের লুণ্ঠন। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এখন সেই ধারাতেই বেশ ‘সাফল্যের’ সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। কেননা, রাষ্ট্র এই লুণ্ঠনকে সমর্থন দিয়ে সহায়তা করছে। আর তাই শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সম্পদ লুটে নেওয়ার কর্মযজ্ঞ বিস্তৃত হয়েছে ব্যাংক খাতে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে অনিয়ম-জালিয়াতি ঘটিয়ে ক্রমাগতভাবে অর্থ লুট করা হয়েছে কয়েক বছর ধরে। আর এই কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট পরিচালনা পর্ষদ বসানো হয় ২০০৯ সালেই। এক হল-মার্ক কেলেঙ্কারিই বুঝিয়ে দিয়েছে, এই ব্যাংকগুলো কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কার্যত নির্বিকার ছিলেন এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের অসৎ পরিচালকদের বিদায় করতে হবে
সম্প্রতি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের যে নাজুক চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা এককথায় চরম বিপর্যয়কর। ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম তো ছিলই, ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) নামেও যে নির্বিচারে ব্যাংকের তহবিল ব্যবহার করা যায়, তাও এবার প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদ থেকে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ—কারোরই এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে উদ্বেগ আরও বাড়ে, অর্থমন্ত্রী যখন বলেন যে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এসব বলে অবশ্য তিনি যে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাও স্পষ্ট।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি কেন ও কীভাবে নাজুক হচ্ছে, তা অর্থমন্ত্রী সাড়ে পাঁচ বছর ধরে জানেন। অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রীর নজরদারির মধ্যেই এসব অনিয়ম-দুর্নীতি-লুণ্ঠন হয়েছে, ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকেই এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাঁকেই এর প্রতিকারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।