নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না, এটি উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে একটি মহলের মধ্যে বাড়ছে দুর্নীতির প্রবণতা।
দেশে ১৪ বছর ধরে ভিওআইপির অবৈধ কারবারসহ বিভিন্নভাবে বৈদেশিক কলের ক্ষেত্রে অরাজকতা অব্যাহত রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে এ খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অনেক প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও অবৈধ কারবারিদের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর কারণে তা সফল হয়নি। প্রতিদিন যে পরিমাণ বৈদেশিক কল দেশে আসা ও দেশ থেকে বাইরে যাওয়ার কথা, তার অর্ধেকই থেকে যাচ্ছে সরকারি হিসাবের বাইরে। ফলে সরকার এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারগুলোর দাবি, প্রতিদিন বাংলাদেশে আসা আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ ১৪ কোটি মিনিট। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি মিনিট কলের রাজস্ব চোরাকারবারিদের পকেটে চলে যাচ্ছে, যার পরিমাণ ১২ কোটি টাকার ওপরে।
এ খাতে অরাজকতা দূর করতে সরকার ২০১০ সালে বৈদেশিক কলের ক্ষেত্রে ২০০৭ সালের নীতিমালা সংশোধন করে নতুন ‘আইএলডিটিএস পলিসি’ গ্রহণ করে আইজিডাব্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজি ও ভিএসপি লাইসেন্স দেয়। এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কারণে বর্তমানে ৯টি আইজিডাব্লিউ অপারেটরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মামলাও হয়েছে কয়েকটির নামে। যেগুলো চালু রয়েছে সেগুলোও নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছে না। নিয়মিত বার্ষিক লাইসেন্স ফিও পাচ্ছে না সরকার। এই ফি কমিয়ে দিয়েও তেমন সুফল মিলছে না।
ভিওআইপির অবৈধ কারবার চালু থাকায় নানাভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন মোবাইল অপারেটররাও। চলতি বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ১৪টি ভিওআইপির অবৈধ স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভিওআইপিসামগ্রী জব্দ এবং ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে বিটিআরসি ও র্যাব। কিন্তু এসব অভিযানে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ কর্মীরাই গ্রেপ্তার হয়। এর পেছনে যেসব রাঘব বোয়াল রয়েছে তাদের চিহ্নিত করার কোনো চেষ্টার কথা শোনা যায়নি। অন্যদিকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডার বা ভিএসপি অপারেটররা এখন এ দায়িত্ব থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে। বিটিআরসির কাছে ধরণা দিয়েও তারা কোনো সমাধান পাচ্ছে না।
এই লাইসেন্স সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে দেশে ভিওআইপি উন্মুক্ত হলো এবং ভিওআইপির অবৈধ কারবার বন্ধ হবে। গত বছর ২৫ মার্চ বিটিআরসি এ লাইসেন্স হস্তান্তর করে। শর্ত ছিল লাইসেন্স নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে এ সেবা চালু করতে হবে। সে সময় গত ২৫ সেপ্টেম্বর পার হয়ে গেছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশির ভাগ লাইসেন্সধারীই ওই সেবা চালু করতে পারেনি। অনেকে হতাশ হয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। আর যারা এ আর্থিক ক্ষতি মেনে নিতে পারছে না তারা সাংগঠনিকভাবে সংকট নিরসনের পথ খুঁজছে। প্রযুক্তি খাতে এই অবস্থার সমাধান করতে অবৈধ এই ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত অবৈধ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাইমুর রহমান
সম্পাদক