পাশাপাশি জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের বক্তব্য দেয়াকে স্মরণকালের বৃহত্তম বেয়াদবি আখ্যা দিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, আমি এই বেয়াদবি আর বরদাস্ত করবো না। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৮তম জন্মদিন উপলক্ষে রোববার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী মোটরচালক লীগের পাশাপাশি দু’টি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পশ্চিম দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। অপরদিকে পূর্বপাশে মোটরচালক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান অতিথি ড. হাছান মাহমুদ। বক্তব্য শুরু করতে গিয়ে সাজেদা চৌধুরী অপর প্রান্তের মাইকের বিকট আওয়াজে বারবার বিব্রত হচ্ছিলেন। এ সময় তিনি ড. হাছান মাহমুদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এখানে পাল্টাপাল্টি অনুষ্ঠান আমি আশা করিনি। এখানে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য হবে না। এটা জামায়াতি হিসেব…। নতুন নেতারা প্রতিপক্ষ হিসেবে বক্তব্য দেবেন এটা প্রথম দেখলাম। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আওয়ামী লীগ অতীতে করেনি। এখনও আশা করি না। এ ধরনের আস্ফালন তার রাজনৈতিক জীবনে দেখেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এইটা কোনদিন দেখি নাই, আশা করি আর কোনদিন দেখবোও না। এখন নতুন নতুন নেতা জন্মে বেয়াদবি শুরু করেছে। এ বেয়াদবি আমি সহ্য করবো না। তাকে একটু সংবরণ করতে বলবো। এই খানে (৩২ নম্বর) কোনদিন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য হয়নি। আর কোনদিন হবেও না। আমি একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। বঙ্গবন্ধুর কর্মী। আমি জানি উনি কি ছিলেন, কোথায় ছিলেন। আমি আপনাদের কাছে বিচার দিয়ে গেলাম। তিনি হাছান মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উনি কে? আগে কি ছিলেন? কিভাবে উনি নেতা হয়েছেন, রাজনীতিবিদ হয়েছেন তা-ও আমার জানা আছে। হাছানের বক্তব্য চলতে থাকলে তিনি বলেন, এখন বাহাস করতেছেন, যা হোক আমি কিছু বলতে চাই না। আজকের দিনে শেখ হাসিনার জন্মদিন। তার এভাবে চিৎকার করে অপজিটে বক্তৃতা করায় আমাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছেলেরা যে মিটিং করছে তাদেরকে যেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বক্তৃতা করছেন। সৈয়দ সাজেদা বলেন, এ দল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছিল না। সব নেতাই গায়েব হয়ে গিয়েছিল। যখন নেতার ?লাশ পড়েছিল তিন দিন কেউই ছিল না। প্রতিবাদ করেনি। একমাত্র আমিই প্রতিবাদ করেছি। এখন অনেকেই নেতা বনে গেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচার শুরু করেছেন। আপনি কে? মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি কোথায় ছিলেন? এখন বড় বড় কথা বলছেন। বেয়াদবি করছেন। এই বেয়াদবি আমি বরদাস্ত করবো না। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠান থেকে কয়েকজন দৌড়ে মোটরচালক লীগের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি হাছান মাহমুদকে জানালে তিনি বক্তব্য বন্ধ করে দেন। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠান শেষ হলে হাছান মাহমুদ বক্তব্য শুরু করেন। মোটরচালক লীগের আলোচনা সভা শেষে সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ কোন কথা না বলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে যান। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এদের সঙ্গে বিদেশীরাও জড়িত। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি দেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করছেন সে তথ্য সরকারের কাছে আছে। সরকার এ ধরনের ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করবে না উল্লেখ করে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে খালেদা জিয়াকে বিরত থাকার আহ্বান জানান হানিফ।
‘সাজেদা ফুফু ছিলেন আয়োজকরাও জানতেন না’
এদিকে জ্যেষ্ঠ নেতা সাজেদা চৌধুরীর ‘উষ্মা’ প্রকাশের বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি জানতামই না পাশের স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠানে সাজেদা ফুফু রয়েছেন। আয়োজকরাও বিষয়টি জানতো না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের বক্তব্যের পরেই নিজের অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুরুর কথা মোটরচালক লীগের আয়োজকদের আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি করেন সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ওখানে হানিফ ভাইয়ের বক্তব্যের পর আমার অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য শুরু করি। আমাদের আওয়াজ যেমন ওখানে যাচ্ছিল, তেমনি সেখানকার আওয়াজও আসছিল। ভাষণের দু’তিন মিনিটের মধ্যে যখন জানতে পারি সাজেদা ফুফু বক্তব্য দিচ্ছেন তখনই মাইক বন্ধ করে দিই। সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্যের পরই আবার বক্তব্য রাখেন বলে জানান হাছান। তিনি বলেন, ফুফু হয়তো কিছু বলেছেন, আমি সেখানে শুনিনি। এখন জানলাম। আয়োজকরা তো জানতোই না যে সাজেদা ফুফু আছেন সেখানে। আমার তো জানার প্রশ্নই উঠে না।