ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রহিমা বেগম দুই হাজার ৫০০ টাকার নতুন নোট বিক্রি করেন এক গ্রাহকের কাছে। আড়াই হাজার টাকা বদলে নিতে গ্রাহক তাঁকে দেন দুই হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ এ থেকে রহিমার আয় হয় ১০০ টাকা।
রহিমা নিজে এবং তাঁর সঙ্গের একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থেকে ১১ হাজার টাকার নতুন এই নোটগুলো সংগ্রহ করেন ওই দিন সকালেই। ত্রিশোর্ধ্ব রহিমা জানান, তাঁর আয় ঈদ সামনে রেখে খানিকটা বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো দিন আয় হয় ৬০০-৭০০ টাকা, আবার কোনো কোনো দিন হাজার, বারো শ টাকাও হয়।’ এ জন্য কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে রহিমা নতুন টাকা সংগ্রহ করেন।
ঈদ উদ্যাপনের এক অনুসঙ্গ হয়েছে নতুন টাকা। প্রিয়জন বিশেষত শিশুদের হাতে নতুন টাকা তুলে দিতে চান অভিভাবকেরা।
আর এ কারণেই ঈদ সামনে রেখে নতুন টাকার জমজমাট ব্যবসাও দেখা যায় রাজধানীর বিশেষত মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকাতে। নিম্ন আয়ের কিছুসংখ্যক লোক এই ব্যবসা করেন। যদিও সারা বছর ধরেই নতুন টাকা বেচাকেনা চলে এসব এলাকাতে। তবে ঈদের আগে ব্যবসাটা হয় জমজমাট।
অন্য বছরগুলোতে ঈদের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনেই নতুন টাকা বেচাকেনার একটা বাজার বসে যেত। গত রোজার ঈদ অর্থাৎ ঈদুল ফিতর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে আর নতুন টাকার ব্যবসায়ীদের বসতে দিচ্ছেন না। তবে পাশেই সেনাকল্যাণ ভবনের সামনেই বসেছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের নিচতলায় তিনটি কাউন্টারে ও মূল ভবনের নিচতলায় একটি কাউন্টারে দেওয়া হয় নতুন টাকা। এগুলোর তিনটি কাউন্টারে নতুন টাকা দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে আর একটা কাউন্টার রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বা ভিআইপিদের জন্য। যেকোনো গ্রাহক তার টাকা বদলে যেকোনো অঙ্কের নোট নিতে পারেন প্রতিদিন। তবে প্রতিজনকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নতুন নোট দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার জোয়ার্দার ইসরাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদে তাঁদের নতুন নোট ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর বাছাই করা পুরোনো ছোট নোট ছাড়া হচ্ছে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। এসব নতুন ও বাছাই নোট ইতিমধ্যেই দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যেমন নতুন নোট দেওয়া হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকেও এই নতুন নোট বদলি করে দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২০টি শাখায়, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাঁচটি করে শাখাতে এবং অবশিষ্ট যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা রয়েছে, সেসব জেলাতে তিনটি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা থেকে সরাসরি গ্রাহকেরা নতুন টাকা বদলে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এবার। প্রতি ব্যাংকে প্রতিদিন ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে বদলে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতিজনকে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নতুন নোট দিতে পারবে বলে জানান কারেন্সি অফিসার। একইভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাউন্টার থেকে প্রতিজন একই পরিমাণ নতুন নোট বদলে নিতে পারছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাউন্টারে গতকাল সকালে দাঁড়িয়ে থাকা নতুন টাকার ব্যবসায়ীদের একজন হচ্ছেন হানিফ শেখ। তিনি গুলিস্তান এলাকাতে নতুন টাকার ব্যবসা করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁরা কয়েকজন মিলে লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের কাছে যেই আসুক নির্ধারিত পরিমাণ নতুন টাকা তাঁরা সবাইকে দিতে বাধ্য। কাউকে তো তাঁরা বলতে পারবেন না যে তাকে নতুন টাকা দেওয়া যাবে না। ‘সবারই সম-অধিকার এ ক্ষেত্রে’—বলেন এক কর্মকর্তা।