বাংলাদেশের শ্রমিকেরা যদি বঞ্চিত হন, তাহলে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা বঞ্চিততর। যেখানে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফিবছর শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা, সেখানে ঈদের বোনাস থেকেও তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রতিবছরই দুই ঈদের আগে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় মালিকেরা ইচ্ছে করেই বেতন-বোনাস নিয়ে ঝামেলা করেন বলে অভিযোগ আছে।
২১ সেপ্টেম্বর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদের বোনাস ও ২ অক্টোবরের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন দেওয়ার কড়াল করেছিলেন মালিকেরা। কিন্তু খোদ বিজিএমইএর ভাষ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে ২০ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়নি। আর শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, ৬০ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়েছে। বাকি কারখানার শ্রমিকেরা কি তাহলে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবেন? এসব কারখানায় ঈদের আগে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এ ব্যাপারে সরকারের নীরবতা ও বিজিএমইএর উদ্যোগহীনতা অগ্রহণযোগ্য।
বিষয়টি তদারক করা যাঁদের দায়িত্ব, সেই শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজিএমইএর সভাপতি বর্তমানে প্যারিসে রয়েছেন একটি সেমিনারে যোগ দিতে। আর সংগঠনটির তিন সহসভাপতি নিউইয়র্ক গেছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে। দেশে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার কেউ নেই।
গত ঈদের আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া তোবা গ্রুপের শ্রমিকেরা মারাত্মক অর্থসংকটে পড়েছেন। চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে তাঁদের ছাঁটাই করা হলেও পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা বলে জামিন নিয়ে এখন টালবাহানা করছেন। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তিনি বিজিএমইএর দোহাই দেন। অন্যদিকে বিজিএমইএ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কিছু করার নেই। এ অবস্থা চলতে পারে না।
তাই ঈদের আগে তোবাসহ সব কারখানার মালিক যাতে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে বাধ্য হন, সে ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।