নিজের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে অনুতপ্ত নন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মেক্সিকো থেকে বিবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর এই অবস্থানের কথা স্পষ্ট জানান।
গত রোববার নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও টেলিভিশনের টক শো নিয়ে বক্তব্য দেন। এতে সভাস্থলেই প্রতিবাদ করেন অনেকে।
বিবিসি রেডিওর সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকারের বিবরণ:
বিবিসি: আপনার সঙ্গে কি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্কে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের যোগাযোগ হয়েছে?
লতিফ সিদ্দিকী: না, আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
বিবিসি: কথা হয়নি?
—না।
বিবিসি: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে?
—আমি সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি না। কারণ তিনি আমাকে একটা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই দায়িত্বটা আমি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করি।
বিবিসি: আপনার বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ও সমালোচনা করছেন—সে বিষয়ে আপনি কী জ্ঞাত?
—হু, জ্ঞাত।
এই পর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকীকে নিউইয়র্কে দেওয়া তাঁর বক্তব্য শোনাতে চায় বিবিসি।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমাকে শোনাতে হবে না। যা রেকর্ড করা আছে, ওটা ঠিকই আছে। আমি বলেছি।
বিবিসি: তাহলে আপনি দায়িত্ব স্বীকার করছেন?
—আমি ১০০ ভাগ দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেব না মানে? আমি যা বলব, তার দায়িত্ব নেব না, কে বলল আপনাকে? আমি একজন দায়িত্বশীল লোক।
বিবিসি: আপনি কি সেই বক্তব্য পরে আবার শুনেছেন?
—আমার শোনার দরকার নেই। আমি শুনতে পাচ্ছি যে কেউ কেউ জটিলতা…।
বিবিসি: সেটা নিয়ে এখন আপনার অনুভূতি কী, আপনার কী মনে হচ্ছে?
—আমার কোনো অনুভূতি নেই। আমার বিশ্বাসের কথা আমি বলেছি। কারও কারও আঘাত লাগতে পারে। এখন তারাও আমাকে আঘাত করে মতামত প্রকাশ করছে। তাতেও আমি বিরক্ত হচ্ছি না।
বিবিসি: কিন্তু আপনার এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আপনাকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হতে পারে—এটাই জানার পরে আপনি কি দুঃখিত বা অনুতপ্ত?
—না, আমার অনুতাপ বা দুঃখের কোনো কারণ নেই। আমার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনে যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা করবেন। আমি যদি তাঁর জন্য বোঝা হয়ে যাই, তিনি আমাকে রাখবেন কেন?
বিবিসি: আপনার বক্তব্যের সমালোচনা হয়েছে যে ইসলাম ধর্মে যারা বিশ্বাসী, তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আপনি কি এটার সঙ্গে একমত?
—তারা হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষ মেরে ফেলতেছে; ওটা করতেছে, সেটা করতেছে, তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে না। আমি একটা…এই হজ তো মোহাম্মদের (হজরত মোহাম্মদ স.) জন্মের আগেও প্রচলিত ছিল। এটা কি মোহাম্মদ (মোহাম্মদ স.) প্রচলন করেছে? আর তাবলিগের তো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাবলিগের মাধ্যমে আমি মনে করি, ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করার ঘটনা ঘটছে। ….ওদিকে হলো সংঘ পরিবার, এদিকে তাবলিগ পরিবার। এ নিয়ে এত কথার দরকারটা কী আছে?
বিবিসি: কিন্তু যাঁরা বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বা তাতে আহত হয়েছেন, তাঁরা বলছেন যে ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভকে আপনি আঘাত করেছেন।
—এটা তাদের অধিকার। আমি কাউরে…আমি ইসলাম ধর্মের কোনো স্তম্ভকে আঘাত করি নাই। আমি আমার মতামত প্রকাশ করেছি।
বিবিসি: ইসলাম ধর্মের নবীকে নিয়ে আপনি যে মন্তব্য করেছেন…
—আমি কোনো কিছুকেই নিয়ে মন্তব্য করি নাই। আমি যা করেছি, আমার বিশ্বাসের কথা বলেছি। আমি ব্যক্তিসত্তা হিসেবে, আমি একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে আমার মতামত আমি প্রকাশ করতে পারি। ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য এত বড় বড় কথা বলা হয়। তাহলে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় কেন হস্তক্ষেপ করা হবে?
বিবিসি: কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, ব্যক্তি হিসেবে আপনি যে মন্তব্য করতে পারেন, সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সেই বক্তব্য বলার ক্ষেত্রে আপনার কিছু বিধিনিষেধের অধীনে থাকতে হতে পারে?
—হ্যাঁ, বিধিনিষেধ আছেই। সেটা তো আমি আমার দেশে করি নাই। আমি ভাবছিলাম মুক্ত পৃথিবীতে আসছি, যেখানে সবাই মুক্ত বিহঙ্গ, এখানে কোনো কিছুতেই বাধা নাই। এখানে যে কালো বিড়াল এত রয়ে গেছে, তা তো আমি জানি না।
বিবিসি: আপনি কি তাহলে পদত্যাগ করবেন?
—আমি কিছুই করব না। আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দেবেন, আমি শুধু তাই প্রতিপালন করব।
বিবিসি: আপনি ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলছেন, বাংলাদেশে অনেকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য শাস্তি হয়েছে…
—এটা যদি আইনের মধ্যে পড়ে, তাইলে আমার যে শাস্তি হবে, আমি আনন্দের সঙ্গে মেনে নেব।
বিবিসি: তাহলে আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করছেন না বা সেখান থেকে সরে আসছেন না?
লতিফ সিদ্দিকী: প্রশ্নই ওঠে না। একমাত্র আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার নেতা যদি আমাকে আদেশ করেন, আপনি এটা প্রত্যাহার করেন। তাঁর সম্মানে আমি এটা প্রত্যাহার করতে পারি। তা ছাড়া কোনো কিছুতেই আমি বক্তব্য প্রত্যাহার করব না।