কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ইব্রাহিম হোসেন খান।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদে রাজধানীর বর্জ্য অপসারণে সরকারি সেবা সংস্থা সিটি কর্পোরেশনকে হিমশিম খেতে হয়। এতে নগরবাসীর নানা প্রশ্নের সম্মুক্ষীণ হতে হয় সরকারি এ সংস্থাটিকে। তাই এবার শুধু সিটি কর্পোরেশন নয় পাশে থাকবে সেনাবাহিনী, ঢাকা ওয়াসা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আর এতে এবার ৪৮ ঘণ্টা নয়, এর আগেই রাজধানী পরিষ্কার হবে।
এ লক্ষে প্রস্তুত রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন লেডিসক্লাব মাঠের অস্থায়ী পশুর হাট থেকে বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে শুরু করবে তাদের অভিযান।
এদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশন বনানী অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণের মধ্য দিয়ে তাদের কাজ শুরু করবে।
ইব্রাহিম হোসেন খান জানান, এবার নিয়মিত পাঁচ হাজার ২০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মীর পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে ১২ জন করে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেওয় হয়েছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মাঠে থাকবে পাঁচ হাজার ৮৮৪ জন পরিচ্ছন্নকর্মী।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দ্রুত বর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য নির্দিষ্ট ড্রাম বা ডাস্টবিনে ফেলার জন্য অনুরোধ করেছে সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ক্যাপটেন (অব.) বিপন কুমার সাহা আগেই জানান, এবার ৪৮ ঘণ্টা নয়, তার আগেই রাজধানীর সব রাস্তাঘাট পরিষ্কার হয়ে যাবে। সে লক্ষেই আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি বলেন, ঈদের দিন দুপুর ২টায় বনানী পশুরহাটের বর্জ্য অপসারণের মধ্য দিয়ে এ কাজ শুরু হবে। আমাদের টার্গেট থাকবে পরদিন অর্থাৎ ৭ অক্টোবরের মধ্যেই শতভাগ কাজ সমাপ্ত করা। এজন্য নিয়মিত পরিচ্ছন্নকর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত লোকও নিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য সাড়ে সাত হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এবার কোরবানিতে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত বর্জ্য হবে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার অতিরিক্ত ১২০টি ট্রাক এবং ঈদের আগের রাতে আরো ১৭টি ট্রাক নিয়োজিত থাকবে বর্জ্য অপসারণে। একই সঙ্গে পিসিএসপির (ভ্যান সার্ভিস) প্রায় দুই হাজার চারশ’ কর্মী, ছয়শ’ ভ্যানগাড়ির সাহায্যে বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজে নিয়োজিত থাকবে।
বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য পাঁচশ’ ২০টি নতুন হাতগাড়ি প্রতিটি ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়েছে। ঈদের আগেই ৫০টি নতুন কনটেইনার বক্স ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে অবস্থিত অস্থায়ী পশুর হাটগুলো পরিষ্কার করতে ছিটানো হবে ব্লিচিং পাউডার। এরপর দুর্গন্ধ দূর করতে দূষিত স্থানগুলোতে সুগন্ধিযুক্ত পানি স্প্রে করা হবে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে স্যাভলন মিশ্রিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দ্রুত বর্জ্য অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত ভ্যান সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য পাঁচটি পে-লোডার, সাতটি টায়ার ডোজার, তিনটি এসকেভেটর, তিনটি চেইন ডোজার, ২৫টি ডাম্পার, পাঁচটি পানির গাড়ি, চারটি ট্রেইলর, দু’টি প্রাইম মোভার পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে।
একই সঙ্গে ঈদের দিন সকাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসার তিনটি পানিবাহী গাড়ি ধোয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
কোরবানির পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি বা বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ ধরনের ২৫ হাজার পলিমার ব্যাগ ফ্রি সরবরাহ করা হবে। নগরবাসী এসব ব্যাগ ভর্তি করে জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে রাখবেন। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মীরা সেসব বর্জ্য অপসারণ করে নিয়ে আসবেন। কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়মকানুনের বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে লিফলেট/স্টিকার বিতরণ করা হবে।
প্রতিটি পশুর হাটে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। এসব কাজ মনিটরিং করার জন্য প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ২১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণে সাহায্য পেতে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে, যার টেলিফোন নম্বর ০৯৫৫৬০১৪।
এছাড়া নগরীর পাঁচটি অঞ্চলে বর্জ্য অপসারণের জন্য যেকোনো সহযোগিতা পেতে নিচের নম্বরগুলোতে ফোন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে।
অঞ্চল-১ (ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, নিউমার্কেট, মন্ত্রিপাড়া, সেগুনবাগিচা ও পরীবাগ) ০১৭১২৫৯২১২৬। অঞ্চল-২ (খিলগাঁও, বাসাবো, মতিঝিল, কমলাপুর ও মালিবাগ) ০১৯৩৭৬৯১৬৩৯। অঞ্চল-৩ (লালবাগ, হাজারীবাগ, আজিমপুর, ঝিগাতলা ও কামরাঙ্গিরচর) ০১৯১১৭০৯৮৭৮। অঞ্চল-৪ (নয়াবাজার, সিদ্দিকবাজার, লক্ষ্মীবাজার ও সূত্রাপুর) ০১৭১১১৬৯৭৫৭। অঞ্চল-৫ (সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, জুরাইন, দয়াগঞ্জ ও গেন্ডারিয়া) ০১৭১২২৯৩১৮৬।