দেশের গার্মেন্ট কারখানার পরিদর্শনে বের হওয়া ত্রুটি এবং তা সংশোধনে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা দেখতে গভীর নজর রাখছে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। এ ছাড়া পরিদর্শনে কারখানার অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সমাধানে আগামীতে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাও তারা জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি কারখানায় অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তাসামগ্রী ব্যবহারে কিছু মালিকের উদাসীনতা নিয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গতকাল বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের সঙ্গে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র বৈঠক হয়। বৈঠকে বিজিএমইএ’র কাছে এসব বিষয় জানতে চান তারা। রাজধানীর গুলশানে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম’র কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এইচএন্ডএম, ভিএফ করপোরেশন, জেসি পেনিসহ ২৫টি ক্রেতা প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম, পরিদর্শক দল অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড) এর প্রতিনিধি রব ওয়েজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে এমন কারখানার ত্রুটি সংশোধনে ইতিমধ্যে ব্র্যান্ডগুলো অর্থ দেয়ার বিষয়ে এগিয়ে এসেছে। বৈঠকে এ বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। ব্র্যান্ডগুলো ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) মাধ্যমে ১ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ বোর্ডের কাছ থেকে যথাযথ অনুমোদন পাচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছে তারা।
বৈঠকে বিষয়ে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করতে আগামীতে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা ক্রেতাদের জানানো হয়েছে। রানা প্লাজার পর গার্মেন্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি হলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে মাত্র ২ শতাংশ কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে ক্রেতারা এখন আবার বাংলাদেশমুখী হওয়ার কথা ভাবছেন। পরিদর্শনে কিছু কারখানায় ছোটখাটো ত্রুটিকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। সম্প্রতি অ্যাকর্ডের পরিদর্শনকৃত কারখানায় ৮০ হাজার ধরনের সমস্যা পাওয়া গেছে বলে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এতে ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। তাদের আস্থা নষ্ট হয়। বৈঠকেও ক্রেতারা এ ইস্যুটি তুলেছেন বলে তিনি জানান।
রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের নিরাপত্তা মান পরিদর্শনে ইউরোপ ও আমেরিকার আলাদা দুটি দল কাজ করছে। ইউরোপীয় অ্যাকর্ড ছাড়াও আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি (অ্যালায়েন্স) ইতিমধ্যে তাদের অর্ডার সরবরাহ করে এমন প্রায় ৬০০ কারখানা পরিদর্শন করেছে। অন্যদিকে অ্যাকর্ড তাদের অর্ডার সরবরাহ করে এমন ১৬০০ কারখানার মধ্যে ১১০০ কারখানার পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে। উভয়ের পরিদর্শনে ৩০টির মতো কারখানা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে পরিদর্শন হওয়া সব কারখানায়ই কম বেশি ত্রুটি পাওয়া গেছে।