র্যাব বিলুপ্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেয়া এবং ২০১১ সালে ১৬ বছরের শিশু লিমন হোসেনের ওপর হামলা চালানোয় র্যাব সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা। ওই ঘটনায় লিমন একটি পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব পরণ করে। র্যাবের সব সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবর্তন করে, তাদের স্থলে একটি পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক বাহিনী গঠনের আহ্বান পুনরায় ব্যক্ত করেছে এইচআরডব্লিউ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশ: নো জাস্টিস ফর উন্ডেড চাইল্ড’ শিরোনামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে এসব কথা বলা হয়। এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, লিমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগ শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, এটা ভাল। কিন্তু, প্রাথমিক বিবেচনায় তাকে কখনোই অভিযুক্ত করা উচিত ছিল না। লিমনকে যে র্যাব কর্মকর্তা গুলি করেছিলেন এবং লিমন স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে যারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে বিচার প্রক্রিয়াকে ভুল পথে চালিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, র্যাব মৃত্যু স্কোয়াড। এর সংস্কার করা যাবে না। তিনি বলেন, র্যাব ক্ষমতার অপব্যবহার করলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, র্যাবকে একেবারে বিলুপ্ত করতে কোন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, সে প্রতিশ্রুতি অন্তঃসারশূন্য রয়ে যাবে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু, তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। র্যাব সদস্যদের আনাড়ির মতো পরিচালিত একটি অভিযানে লিমন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তারা র্যাব বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছিল। একই সঙ্গে ক্রসফায়ার ও অন্যান্য হত্যাকা-ে যারা নিহত হয়েছিল, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল তারা। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর র্যাব শ’ শ’ হত্যাকা- ঘটালেও, তারা এ ব্যাপারে বড় ধরনের কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে বলা হয়, এইচআরডব্লিউ ও বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যানুযায়ী র্যাব শতাধিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনায় জড়িত। প্রমাণ থাকার পরও এখন পর্যন্ত র্যাবের কোন সদস্য বিচারের সম্মুখীন হননি। এর আগে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সদস্যরা গুম, হত্যাকা- ও র্যাবের অন্যান্য আইন ভঙ্গের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।