রাজধানীর গুলশানে আমরি হোটেলে ডেকে নিয়ে নজরুল ইসলাম নামে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবাসয়ীকে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা হলো হেলাল উদ্দিন (৩৬), আমিনুল ইসলাম সোহাগ (২০) ও রকিবুল ইসলাম (৩২)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হেলাল সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রফিকুল ইসলাম ঘটনার পরপরই মালয়েশিয়া পালিয়ে যান। তথ্য গোপন করার অভিযোগে তার ভাই রকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। খুনিরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চেতনানাশক সোহাগের ফার্মেসি থেকে ক্রয় করেছিল। গতকাল বিকালে র্যাব-১ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুনিরা যে প্রাইভেট কারটি ব্যবহার করেছিল র্যাব সেটিও উদ্ধার করেছে। গত ১৩ই অক্টোবর গুলশান-২ নম্বর এলাকার ‘আমরি’ হোটেলের ৭০১ নম্বর কক্ষ থেকে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের (৪০) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পরিবার। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে হোটেলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার কিছুটা ধারণা পায়। ঘটনার ছায়া তদন্ত করছিল র্যাব। র্যাব-১ এর মেজর আসিফ কুদ্দুস জানান, ব্যবসায়ী নজরুলের সঙ্গে থাকা প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হলো রফিকুল ইসলাম। তার সঙ্গে ব্যবসায়ী নজরুলের পূর্ব পরিচিতি ছিল। পরিচয়ের সূত্র ধরেই রফিকুল ও হেলাল মিলে এ হত্যাকাণ্ডের ছক আঁকে। তারা গুলশানের হোটেল আমরির ৭০২ নম্বর কক্ষটি ভাড়া নেয়। সেখানে বিদেশী মুদ্রা ভাঙানোর নাম করে নজরুলকে ডেকে নিয়ে যান। এর আগে তারা মিটফোর্ড এলাকার সোহাগের ফার্মেসি থেকে চেতনানাশক ইনজেকশন ও কেমিক্যাল ক্রয় করে। ঘটনার দিন বিকাল ৩টার দিকে হোটেলে ঢোকে রফিকুল ও হেলাল। বাইরে অপেক্ষায় থাকেন একজন। বদ্ধ কক্ষে রফিকুল ও হেলাল প্রথমে নজরুল চেতনানাশক প্রয়োগ করে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। নজরুল বিষযটি টের পেয়ে বাঁচার জন্য হেলালের ডান হাতের আঙুলে কামড় বসায়। পরে দ্রুত তারা নজরুলকে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে মুখ চেপে হাত পা বেঁধে একটি ইনজেকশন পুশ করে। এরপর শ্বাসরোধ করে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করে। পরে নজরুলের সঙ্গে থাকা কোটি টাকা মূল্যমানের ইউরো ও নগদ টাকা নিয়ে নেয়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর পালানোর জন্য তারা একটি সাদা টয়োটা গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৮৮৯৬) দিয়ে পালিয়ে যায়। বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় হত্যা মিশন শেষ হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য মতে অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব-১ এর মেজর আসিফ কুদ্দুস বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই হেলালকে নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রফিকুলের। সেই অনুযায়ী আগে থেকে মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সের টিকিট বুক দিয়ে রেখেছিলেন। পাসপোর্টে ভিসাও লাগানো ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর পর সে সোজা গুলশান থেকে বিমানবন্দর যায়। সেখান থেকে মালয়েশিয়া চলে যায়। তার পাসপোর্ট নম্বর- অএ১৩২৩৭৭৭। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, রফিকুল সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। সে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মালয়েশিয়ায় আর দ্বিতীয় স্ত্রী থাকে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তার পিতাও দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকেন। তাকে ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া হবে বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।