দেশে প্রতিবছর প্রিম্যাচিউর বেবি জন্মের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রিম্যাচিউর বেবি জন্মের ফলে মৃ্ত্যু সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ শিশুচিকিৎসক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ডা. একেএম আমিরুল মোরশেদ খসরু বলেন দেশে প্রতি বছর ৪ লাখ ৩৭ হাজার শিশু প্রিম্যাচিউর জন্মগ্রহণ করছে। । শিশুমৃত্যুর ৪৫ শতাংশই ঘটছে শুধু প্রিম্যাচিউর বেবির ক্ষেত্রে। প্রিম্যাচিউর শিশুদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকে তারাও পরে নানা অসুখে ভোগে।
এ বিষয়ে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুষ্টির সঙ্গে স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গে নিরাপদ মাতৃত্বের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে , গর্ভধারণকালে মায়ের মধ্যে অপুষ্টি দেখা দিলে ভ্রুণের ওপরও তার প্রভাব পড়ে। ইউনিসেফ বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ১০০ শিশুর ১০ জন প্রিম্যাচিউর জন্মায়। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ বেবির ১৪ জন প্রিম্যাচিউর। ৩৭ সপ্তাহ বা ২৫৯ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে জন্ম নেয়া শিশুকে প্রিম্যাচিউর বেবি বলা হয়।
রোববার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়,আসমা বেগম বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন এবং করজোড় করে ডাক্তারকে বলছিলেন, আমার নাতিকে বাঁচান। আল্লাহর ওয়াস্তে বাচ্চাটাকে ভর্তি করান। কর্তব্যরত ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিলেন, এ শিশুর (প্রিম্যাচিউর বেবি) মতো অনেক শিশুই ভেতরে রয়েছে, যাদের অভিভাবক সিরিয়াল দিয়ে রেখেছেন। এমনটা শুনে আসমা আরও বিলাপ শুরু করেন। একপর্যায়ে নার্সরা তাকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন। এটি আসমা জানান, তার একমাত্র ছেলে অপুর প্রথম সন্তান এটি। ৪ দিন হল তার জন্ম। মা অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই হাসপাতাল থেকেই রেফার করা হয়েছে শিশুটিকে। তার ওজন মাত্র সাড়ে ৬০০ গ্রাম। ২ দিন ধরে শিশুটিকে নিয়ে আসছেন, ডাক্তার বলে দিচ্ছেন, সিট নেই।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, দেশের প্রতিটি জেলা তথা রাজধানীর বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে প্রিম্যাচিউর শিশু এ হাসপাতালে আসছে। ২১১ বিশিষ্ট নবজাতক শিশু ওয়ার্ডটিতে সবসময় রোগী পরিপূর্ণ থাকে। ভর্তি হওয়া শিশুদের অধিকাংশই প্রিম্যাচিউর বেবি।
এমনই পরিস্থিতিতে ১৭ নভেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব প্রিম্যাচিউরিটি দিবস পালিত হয়েছে। প্রতিবছর ক্যালেন্ডার ধরে দিনটি আসে, নানা আঙ্গিকে আলোচনা হয়। তারপর যেমন চলার, তেমনই চলে।
সন্তানসম্ভবা মায়েদের পুষ্টি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুষ্টিবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব লাভের ক্ষেত্রে পুষ্টিশিক্ষা বিশেষভাবে সাহায্য করে। পুষ্টিশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল- অতি দামি মানেই অতি পুষ্টিযুক্ত খাদ্য নয়। গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত স্বল্পমূল্যের দানাশস্য থেকেই পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায়। দানাশস্য, শাকসবজি, দুধ, ডিম, চিংড়ি এবং ছোট মাছ থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায়।