শীতকাল এবং ডিসেম্বর মাস, বাচ্চাদের স্কুলের ছুটি, কিন্তু আপনার অফিস চলছেই। তাই দূরে কোথাও ঘুরে আসা সম্ভব নয়। এখন আপনি কি করবেন? একদিনের ডে অফে ঢাকার কাছেই কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। এই সেদিন আমরা সপরিবারে ঢাকার পাশেই ছোট্টগ্রাম রাজারামপুর ঘুরে এলাম।
বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সকাল ৮টায়। গন্তব্য কাপাশিয়া সড়ক ধরে গাজীপুর সেনানিবাস পার হয়ে হাতের ডানে রাজারামপুর। সকাল সকাল স্টার্ট করায় উত্তরা পার হতে তেমন একটা জ্যাম ছিল না। গাজীপুর চৌরাস্তার কাছাকাছি এসেই আমার ছেলে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল “মা দেখ, কি সুন্দর একটা স্টাচু। লোকটার হাতে বন্দুক কেন?”
১৯৭১ সালে গাজীপুর আস্ত্রাগার লুট করেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আর প্রথম গুলিটা ছুড়েছিল এই চৌরাস্তায়। তাই এই ভাস্কর্যটার নাম “জাগ্রত-চৌরঙ্গি”। আমার ছেলেদের সেই গল্পটা বল্লাম। অনেকটা পথ পার হয়ে গেল গল্প করতে করতে ।
ভাওয়াল উদ্যানের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় বিরতির জন্য থামলাম। ভাওয়াল উদ্যানের বিশ্রামাগার রয়েছে। আমাদের সঙ্গেই খাবার আর পানীয় ছিল। ছোটা একটা যাত্রা বিরতি নিয়ে আবার আরম্ভ করলাম পথ চলা।
গাজিপুর সেনানিবাস আর অরডিনেন্স পার হয়ে সোজা গাড়ি উঠল কাপাশিয়া রোডে। এখান থেকেই মূলত গ্রাম শুরু। চারপাশের পরিবেশই আপনাকে বলে দিবে আপনি আর নাগরিক জীবনে নেই। আশেপাশে অনেকগুলো পিকনিক স্পট চোখে পড়ল। শীতকালের পুরো সময়টা এইসব পিকনিক স্পট সরগরম থাকে।
গাজীপুর সেনানিবাসের পশ্চিমপাশে চমৎকার মিষ্টির দোকান রয়েছে। এখানে একটা ভালো ক্যাফেটেরিয়াও আছে। বিকেলের রোদে বসে কাবাব খেতেও খারাপ লাগবে না।
এখানকার আশেপাশের গ্রামগুলো অনেক প্রাচীন; নামগুলোও চমৎকার।নয়নপুর, ধলাদিয়া, প্রল্লাদপুর, রাজারামপুর। সোনানিবাস পার হয়ে কাপাশিয়ার দিকে ২-৩ কিলোমিটার আগালে পাওয়া যাবে রাজাবাড়ি বাজার। গরমের সময় এই বাজার সরগরম থাকে কাঁঠাল নিয়ে। সারা বছর পাওয়া যায় “সাড়ে বারো ভাজা” (বিশেষ এক ধরনের চানাচুর)। প্রাচীন এই বাজারটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পারুলি নদী। ছোট একটা ব্রিজ পার হলেই চোখে পড়বে উজ্জ্বল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। প্রসিদ্ধ এই মিষ্টির দোকানটিতে সব সময় থাকে তিন রকম আমিত্তি। ছানা, ময়দা আর খেসারির ডালের। আর তাজা মিষ্টির কথা তো বলাই বাহুল্য।
আমরা মিষ্টি থেকে নিজেদের বঞ্চিত করলাম না। বাজার থেকে পেট পুরে মিষ্টি খেয়ে আমরা চলে গেলাম রাজারাম পুর। গ্রামের চার পাশে আবাদ করা ধানি জমি। ধান কাটা শেষ। জমিতে জমে থাকা অল্প পানিতে অগণিত শাপলা। বর্ষার সময় এই জমি গুলোকেই বলে শাপলার বিল। বিলের চার ধারে লাকড়ি শুকাতে দেওয়া।
দূরে কিছু খালি জমিতে গরু চড়ে বেড়াচ্ছে, আর তাদের পিঠে বসে আছে সাদা বক। শীতে এখানে প্রচুর পাখি আসে। তাল পাতার পাখা বানাবে বলে কেটে রাখা হয়েছে বিরাট বিরাট তাল পাতা। আমার ছেলেরা শাপলার বিলে নেমে মনের সুখে শাপলা তুলে নিল। শেষ বিকেলে শাপলা হাতে আমরা আবার রওনা হলাম আমাদের নাগরিক জীবনে। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। গাড়ি না থাকলে বাসেও চলে যেতে পারেন। মহাখালি থেকে সরাসরি কাপাশিয়া যাওয়ার বাস আছে। সেখান থেকে ইজি বাইক অথবা ভটভটি টাইপ গাড়ি আছে যাতায়াতের জন্য।