বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ আর হরতালের কমবেশি প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে। কোথাও কোথাও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শুধু রপ্তানি, কোথাও আবার আমদানি-রপ্তানি দুটোই বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো স্থলবন্দর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহ কার্যক্রমে অচলাবস্থা চলছে, কোনো কোনোটি থেকে অবশ্য পুলিশি পাহারায় সীমিত আকারে পাঠানো হচ্ছে।
বুড়িমারী: স্বদেশ নিউজ ২৪ ডট কমের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি আর হরতালের মধ্যেও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চলছে। পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে।
গত রোববার রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানি করা ভারতীয় পণ্য নিয়ে অনেকগুলো ট্রাক বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পুলিশি পাহারায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত ও ভুটান থেকে আপেল-কমলাসহ বিভিন্ন ফল এবং কয়লা ও পাথর নিয়ে গত শনিবার ২৫৮টি ট্রাক এই স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ৭৫টি ট্রাক কমলা ও ১০০টি কয়লা নিয়ে আসে। একইভাবে গত রোববারও আমদানি পণ্য নিয়ে ২২৩টি ট্রাক বন্দরে ঢোকে। এর মধ্যে ৫৫টি ফলবাহী ও ৬০টি কয়লাবাহী ট্রাক ছিল। গতকাল সোমবার বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেড় শতাধিক ভারতীয় ও ভুটানি পণ্যবাহী ট্রাক এই স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। আরও বেশ কিছু ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল বলে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমদানি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। এ স্থলবন্দর থেকে রোববার বাংলাদেশি পণ্যবাহী ২৫টি ট্রাক ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ঢুকেছে ১৫টি ট্রাক এবং প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল আরও কয়েকটি।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, আমদানি করা ভারতীয় পণ্যবোঝাই ট্রাক সেই দেশ থেকে আসা যাত্রীদের পুলিশি পাহারায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, প্রতিদিনই বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পুলিশি পাহারা দেওয়া হচ্ছে।
হিলি:স্বদেশ নিউজ ২৪ ডট কমের বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, অবরোধে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে এবং দেশটিতে পণ্য রপ্তানি একেবারে বন্ধ রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গত শনিবার রাত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের পাহারায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো শুরু হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, অবরোধের আগে প্রতিদিন বন্দরে পণ্যবাহী ১৩০ থেকে ১৫০টি ট্রাক যাওয়া-আসা করত। এখন তা কমে ৬০ থেকে ৭০টিতে নেমে এসেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ জানান, অবরোধের কারণে ট্রাকভাড়া চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে। এ কারণে আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো যাচ্ছে না। আবার গুদামেও জায়গা ফাঁকা না হওয়ায় ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না।
হিলি স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম মোর্শেদ জানান, অবরোধের কারণে বন্দরে কর্মরত প্রায় ৬০০ শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বেকার হয়ে পড়েছেন।
হাকিমপুরের ইউএনও আজাহারুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে প্রতিদিনই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়। এগুলোর বেশির ভাগই কাঁচামাল। অবরোধের কারণে গত কয়েক দিনে অনেকগুলো ট্রাক বন্দরের ভেতরে আটকা পড়েছে। এতে ট্রাকে থাকা পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি নির্দেশে হিলি স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য বিজিবি ও পুলিশি পাহারায় ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাবান্ধা: স্বদেশ নিউজ ২৪ ডট কমের পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, ২০-দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ভারত থেকে সীমিত আকারে পাথর আমদানি হলেও কোনো পণ্যই রপ্তানি হচ্ছে না। আরেক প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্দরের আশপাশে এখন পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক আটকা রয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের দুই শতাধিক শ্রমিক। আর স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রোদে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
এদিকে শ্রমিকেরা জানান, কাজ না থাকায় তাঁরা সাত দিন ধরে বেকার আছেন। তাই তাঁরা পরিবারের খরচ জোগাতে পারছেন না। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইউসুফ আলী জানান, অবরোধের কবলে পড়ে শ্রমিকেরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম সংকটে আছেন তাঁরা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিরুল ইসলাম জানান, ‘অবরোধের মুখে সীমিত পরিমাণে পাথর আমদানি হলেও রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ ট্রাক সংকটের কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না।
স্থলবন্দরটির ব্যবস্থাপক কাজী আল তারেক জানান, বন্দর চালু রয়েছে। ভারত থেকে শুধু পাথর আসছে। বন্দরে তা আনলোড করেই চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য রপ্তানি হচ্ছে না।
এদিকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, অবরোধের কারণে কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ায় এই বন্দর থেকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বন্দরের সহকারী কমিশনার আবদুল আলীম বলেন, অবরোধের প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে