বিয়ের বাজারে হলুদ বরণ কন্যাদের চাহিদা যেমন তুংগে, মশলার বাজারে হলুদের চাহিদারও তেমনি নেই কোনো শেষ। হলুদ ছাড়া আমাদের রান্নাঘরগুলোকে কল্পনাই করা যায় না। মশলা ছাড়াও রূপচর্চার অনুষংগ হিসেবে কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই। অধিকাংশ তরুণ তরুণীরাই রূপচর্চার অন্যতম উপাদান হিসেবে ভরসা করে থাকেন কাঁচা হলুদের উপর। কেননা অন্যান্য উপাদান গুলোর মত এর নেই কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। অন্যান্য যে কোনো কিছুর চাইতে এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা অনেক বেশী। কিন্তু এত কিছু সত্যেও আমরা অনেকেই জানিনা কাঁচা হলুদের বহুমুখী গুনাগুনগুলো সম্পর্কে। শুধুমাত্র রূপচর্চার উপাদান ও মশলা হিসেবে নয়,চিকিতসাশাস্ত্রেও রয়েছে এর নানা রকম ব্যবহার ও উপকারীতা। চলুন জেনে নেয়া যাক হলুদের নানামুখী গুনাগুন গুলো।
১.বিভিন্ন কাটা ছেঁড়া ও প্রদাহজনিত রোগের জন্যে কাঁচা হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও এলার্জি, আরথ্রাইটিস, এজমা, ব্রণের চিকিতসার জন্যে চিকিতসকরা হলুদ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
২.কোরোনিক ক্যান্সারের প্রধান কারন হল ডিএনএ ও প্রোটিন সেল নষ্ট হয়ে যাওয়া। কাঁচা হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান থাকে,যা এই নষ্ট হয়ে যাওয়া রোধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৩.থাইল্যান্ডের গবেষকগণ দাবি করেন যে,যে সকল রোগী প্রি-ডায়বেটিকস এ আছেন,তাদের মাঝে যারা কারকিউমিন সমৃদ্ধ ক্যাপসুল গ্রহন করেন,তাদের টাইপ টু ডায়বেটিকে আক্রান্ত হবার হার কম দেখা যায়।
৪.অন্যদিকে নিয়মিত হলুদ সেবনের ফলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ হয়। স্থূলতাজনিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে হলুদ। যেমন,হৃদপিন্ডে চর্বিজনিত রোগ,রক্তে চর্বি জমা,কলেস্টোরেল বৃদ্ধি হওয়া ইত্যাদি রোধ করে হলুদ।
৫.কারকিউমিন এমন একটি এন্টিওক্সিডেন্ট উপাদান যা লিভার সিরোসিসের মত রোগগুলোকে প্রতিরোধ করে।
৬.বলা হয়, কারকিউমিন টী মানুষের দ্রুত বার্ধক্য রোধ করে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে চার কাপ সিদ্ধ পানিতে এক চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে হাল্কা আঁচে ১০ মিনিট সিদ্ধ করুন। হলুদের তীব্র ঝাঁজ এড়াতে এবং স্বাদ বৃদ্ধি করতে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
৭.ব্রনের ক্ষত দূর করতে মাস কয়েক নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ক্ষত ও দাগ দুটোই দূর হবে। এলার্জি জনিত কারনে দেহে রেশ বা দাগ হলে হলুদ খুব ভালো কাজ করে।
৮.এত উপকারীতা সত্ত্বেও হলুদ ব্যবহারের কিছু সতর্কতা আবশ্যক। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা আবশ্যক। অতিরিক্ত হলুদ সেবনের ফলে গল্ড ব্লাডারে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। আবার,হলুদ রক্ত জমাট বাঁধাকে ধীর করে দেয়। তাই সার্জারির পর হলুদ সেবন বন্ধ রাখা উচিত।
ডক্টর জোসেফ মারকোলা বলেছেন, হলুদ মানবদেহে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে। অনেকে হলুদ ব্যবহার করে রোদে বের হন। এতে দেহের চামড়া দ্রুত পুড়ে যায়। এটা থেকে বিরত থাকুন। আবার অনেকে হলুদের দাগ দূর করা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এক্ষেত্রে,তুলো দিয়ে কাঁচা দুধ নিয়ে ঘষলেই দাগ দূর হবে। সর্বোপরি,কাঁচা হলুদের এই বহুমুখী গুনাগুনের সদ্ব্যবহার করা আমাদের জন্যে অত্যন্ত জরুরি। কেননা, প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই উত্তম।