১২ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, এর দুই দিন পর উদ্বোধনী ম্যাচ। তার মানে বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনো কয়েকটা দিন বাকি। তবে এক দিক দিয়ে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে কালই। অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা, আকসুর ব্রিফিং, খেলোয়াড়দের ছবি তোলা, ব্যাটে স্বাক্ষর করা—এসব যেন বিশ্বকাপের ঘণ্টাই বাজিয়ে দিয়েছে সিডনিতে বাংলাদেশ দলের টিম হোটেলে।
বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে বাংলাদেশ দল নিয়ে আগ্রহ খুব একটা থাকার কথা নয়। মাশরাফি বিন মুর্তজার সংবাদ সম্মেলনের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল। দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামের দেওয়া তথ্য, ছয়-সাতজন সাংবাদিক কথা বলেছেন তাঁদের সঙ্গে।
সিডনির সংবাদ সম্মেলনে নতুন কিছু বলেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। দেশে বলে যাওয়া কথাটাই আবার শুনিয়েছেন বিদেশি সাংবাদিকদের—দলে তরুণ খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি হলেও তাঁদের ওপর তাঁর আস্থা আছে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁদের ভালো সমন্বয় হলে বাংলাদেশ দলের জন্য হয়তো সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছুই অপেক্ষা করবে। বিশ্বকাপে অধিনায়ক চান সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
‘কাজটা হয়তো খুব কঠিন হবে। তবে আমাদের তরুণ খেলোয়াড়েরা খুবই ভালো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব বেশি না খেললেও তাদের কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা আছে। আশা করি তারা সেটাকে কাজে লাগাবে’—বলেছেন মাশরাফি। সঙ্গে অভিজ্ঞদেরও যে দায়িত্ব আছে, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে অধিনায়কের আশাবাদ, ‘মুশফিক, তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, নাসিরের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরাও দলে আছে। তারা যদি এগিয়ে আসে এবং তরুণেরা তাদের সমর্থন করে, তাহলে আমাদের সামনে বড় সুযোগ থাকবে।’ ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলে মাশরাফিসহ চারজনের জন্য এটি তৃতীয় বিশ্বকাপ, দুজনের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। বাকি ৯ জনই বিশ্বকাপের মঞ্চে এই প্রথম।
গ্রুপ ‘এ’তে বাংলাদেশের ছয় প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। শেষ আট নিশ্চিত করতে হলে অন্তত চারটি ম্যাচ জিততে হবে। সন্দেহ নেই, যেকোনো দুটি বড় দল ছাড়াও বাংলাদেশের চোখ থাকবে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের দিকে। তবে মাশরাফি আগেই বলে নিচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তাদের জন্য কাজটা মোটেও সহজ হবে না। কাজেই আগে থেকে কাউকে টার্গেটও করছেন না, ‘সত্যি বলতে কি, সবাই আশায় আছে আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাব। তবে কাজটা কঠিন হবে। আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ছাড়াও অন্তত দুটি বড় দলকে আমাদের হারাতে হবে। আমরা আগে থেকে কাউকে টার্গেট করছি না, কারণ সেটা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে খেলতে চাই।’
গত ১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর এই দুই মাসে একটিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে আজকের এবং ১২ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিই তাই ভরসা। অবশ্য সিডনি যাওয়ার আগে ব্রিসবেনে তারা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে। এই দুই ম্যাচেই হারলেও মাশরাফির আশা, ব্রিসবেনে দুই সপ্তাহের অনুশীলন বিশ্বকাপে কাজে লাগবে। তিনি তাকিয়ে আছেন পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটির দিকেও, ‘গত দুই সপ্তাহে আমরা ব্রিসবেনে দুটি ম্যাচ খেলেছি, সিডনিতে খেলব আরও দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আশা করছি, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বিশ্বকাপে আমরা আমাদের সেরা খেলাটাই উপহার দেব।’
এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অন্যতম লক্ষ্য ব্রিসবেনের ম্যাচগুলোর ভুল শোধরানো। সেই ‘ভুল’গুলোর তালিকায় রাখা হচ্ছে প্রথম ম্যাচে ৫২ রান করার পর মুমিনুল হককে ব্যাটিং থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তও। সিদ্ধান্তটা নিয়ে অসন্তুষ্ট মনে হলো অধিনায়ক মাশরাফিকে, ‘কোচই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সবাই-ই তো ব্যাট করতে চায়, সে জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কেউ ফিফটি করলে সে অবসর নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ৪৫ ওভারে অলআউট হয়ে গেলাম। এটা ভালো হয়নি। যাই হোক বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে এবং আমরা এটাকে সিরিয়াসলিই নিচ্ছি। চেষ্টা করব চাপ না নিয়ে আর দশটা ম্যাচের মতোই এই ম্যাচগুলো খেলতে।’
সিডনির প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি থেকে বিশ্বকাপের মূল একাদশ ঠিক করে নিতে চায় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান আর আয়ারল্যান্ড ছাড়াও এই দুই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে তাই খেলোয়াড়দের নিজেদের মধ্যেও।