দীর্ঘ তিন বছরেও কুলকিনারা হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা রহস্যের। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই বলে আবারো স্বীকার করলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সময় লাগলেও হত্যা রহস্যের জট অবশ্যই খুলবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো গোয়েন্দাসংস্থা থেকে এখনো কোনো সমাধান আসেনি। সবগুলো সংস্থা মিলে একটি নির্ভুল তথ্য বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে উপসংহার টানার মতো তথ্য নেই। তদন্তের চূড়ান্ত তথ্য আমার কাছে আসেনি।
তিন বছর পরেও কোনো হত্যাকারীদের হদিস পাওয়া যায়নি, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবসহ বহু সংস্থা কাজ করছে, নির্ভুল তদন্তের জন্য। আমি আশাবাদী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই আধুনিক যুগেও মালয়েশিয়ার বিমান খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক সময় খুব তাড়াতাড়ি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। আবার দেরিও হয়। আমরা আশা করছি, আমরা এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।
কোনো জায়গা থেকে বাধা আসছে কি-না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাধা আসেনি। আর বাধা আসলেও বাধাগ্রস্থ হবে না।
প্রতিমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আপনারা স্মারকলিপি দিলেন। আমি জোরদার করে বিষয়টি দেখবো।তিন বছরেও কূলকিনারা হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যা রহস্যের। এমন কি তদন্ত শেষ হবে কবে, তাও বলতে পারছে না র্যাব। অন্যদিকে মামলার বাদী নিহত রুনির ভাই অভিযোগ করেছেন, কবর থেকে লাশ তোলা, বিদেশে ডিএনএ পরীক্ষাসহ যা হয়েছে সবই ভণিতা, সবই লোক দেখানো।
২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুন হওয়ার দিনই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনেক ৪৮ ঘণ্টা চলে গেছে ৩ বছরে। হত্যাকাণ্ডের ২ দিনের মাথায় সে সময়ের পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার জানিয়েছিলেন প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
তবে আইজিপির এ ঘোষণার রেশ কাটার আগেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে তদন্তে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলে ১৮ই এপ্রিল তদন্ত ভার চলে যায় র্যাবের হাতে। মৃত্যুর ৭৩ দিন পর পুন:তদন্তের জন্য আজিমপুর কবরস্থান থেকে সাগর রুনির লাশ তুলে আলোচনার জন্ম দেয় র্যাব।
চমক দেখায় সন্দেহজনক ডিএনএ শনাক্ত করতে আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো, চিকিৎসক নিতাই চন্দ্র রায়ের হত্যাকারীদের সাথে সাগর রুনির খুনিদের যোগসূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা, সাংবাদিক দম্পতির বাড়ির কেয়ারটেকার পলাশ রুদ্র পালকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা ও পরে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন তৎপরতার মাধ্যমে। তিন বছর পেরিয়ে ঘটনার এতো ঘনঘটার পরও কোন ফল না মেলায় এসব তৎপরতার সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মামলার বাদী ও নিহত সাংবাদিক রুনির ভাই নওশের রোমান।
তিনি বলেন, ‘বোঝাই যায় এগুলো লোক দেখানো প্রক্রিয়া ছিলো, মামলা ধামাচাপা দেয়ার ব্যাপারেই তৎপরতা ছিলো বেশি, ৩ বছর হয়ে গেলেও কোনো ফলাফলই পাওয়া যায়নি।’
আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই দাবি করে র্যাব জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাব থেকে পাওয়া রিপোর্ট এবং আরো দু’জনের বক্তব্য যাচাই করে দেখছেন তারা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘ডিএনএ প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা হচ্ছে, পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল হক এই দুজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে, আসলে এই টাইম ফ্রেমের মধ্যে বলা সম্ভব হচ্ছেনা কবে এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’
নিহত সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘ থাকছে মামার বাড়িতেই। সাগরের মা তিন বছরেও মামলা গতি না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অপারগতার কথা জানিয়েছেন।