কলকাতায় ইডেন গার্ডেনস নির্মিত হয়েছিলো ১৮৬৪ সালে। কাছাকাছি সময়েই তৈরি হয় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড ( এমসিজি) । ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৭ সালে। আর কলকাতার ইডেন গার্ডেনস-এ প্রথম ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৪ সালে। শুরুতে ইডেন গার্ডেনস ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ক্রিকেট যুক্ত হয় অনেক পরে। দীর্ঘকাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনসই ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। মেলবোর্ন ছিলো দ্বিতীয়।
১৯৮৭ সালে যখন ৪র্থ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় এই ইডেন গার্ডেনস-এ, তখন এই স্টেডিয়ামটির সংস্কার সাধন করা হয় এবং আসন সংখ্যা ৭০ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। অন্যদিকে এমসিজির আসন সংখ্যা শুরুতে যা ছিলো ৬ হাজার, বিভিন্ন সময়ে তা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে এক লক্ষ বিশ হাজারে উন্নীত করা হয়। এখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম।
চলমান একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ এই ক্রিকেট তীর্থে প্রথমে শ্রীলংকা ও পরে ভারতের বিরুদ্ধে দুটি একদিনের ম্যাচ খেলেছে। আমি খেলতে না পারলেও, ২০১৩ সালে এই দৃষ্টিনন্দন বিশাল স্টেডিয়ামটিকে অনেকটা সময় ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। উপভোগ করেছি ওই বিশালের সৌন্দর্য। এমসিজি-র দোতলায় আছে একটি চমৎকার শপিং সেন্টার। মনে আছে ওই শপিং সেন্টার থেকে আমার ভাগিনা- কিশোর ক্রিকেটার শান্ত ইমনের জন্য একটি অসি-ক্যাপ কিনেছিলাম ১৫ অস্ট্রেলিয় ডলার দিয়ে। জানালার কাঁচের ভিতর দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেডিয়ামের ভেতরটা, অর্থাৎ মাঠটাকে দেখার জন্যই মূলত ওই শপিং সেন্টারে ঢোকা। বুদ্ধিটা আমাকে দিয়েছিলেন ওই বিশাল গ্রউন্ডের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এক সমবিশাল মহিলা- রন্ডা। আমার ক্রিকেট প্রেমের কথা শুনে হাসিমুখের রন্ডা বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু ক্রিকেট ভালোবসি না। আমার প্রিয় খেলা হলো রাগবি।’
এই বিশাল স্টেডিয়ামেই কাল ২৯ মার্চ, সকাল ৯-৩০ মি. একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। এমসিজিতে এইটি হবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় ফাইনাল। এই মাঠে ৫ম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেবার পাকিস্তান বিশ্বকাপ জয় করেছিলো। ৪র্থ বিশ্বকাপ (১৯৮৭) ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কলকাতার ইডেন গার্ডেনস-এ। সেবার বিশ্বকাপের আযোজক ডিফেন্ডিং চ্যাম্প ভারত ইংল্যান্ডের কাছে সেমিতে হেরে বিদায় নেয়। কিন্তু ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
তখন পর্যন্ত এরকম ধারণাই করা হতো যে, যারা বিশ্বকাপ আয়োজন করে তারা বিশ্বকাপ জিততে পারে না।
১৯৯৬ সালে, ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপে এসে এই ধারণায় পরিবর্তন আসে। পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকা যৌথভাবে ৭ম বিশ্বকাপের অযোজন করে। এবং লাহোরে আনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শ্রীলংকা বিশ্বকাপ জিতে নেয়।
ওটাই ছিলো আযোজক হয়ে ক্রিকেট-বিশ্বকাপ জেতার শুরু। মাঝখানের কিছুদিনের সৌজন্য শেষে, ২০১১ সালে এসে অন্যতম আয়োজক ভারত বিশ্বকাপ জিতে নেয়। ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিলো আরেক আয়োজক শ্রীলংকা।
২০১৫ সালে, ১১দশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দেখছি- আয়োজকদের বিশ্বকাপ জেতার ধারাটারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।
আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি, (ম্যান ইজ মোরটাল, মানুষ মাত্রই ভুল করে) তাহলে আস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ছাড়া তৃতীয় কোনো দেশের পক্ষে ক্রিকেটের একাদশ বিশ্বকাপ জেতার আর কোনো সুযোগ থাকছে না। এমনটি তো আর হবে না যে- দুইদেশ খেলবে আর জিতবে তৃতীয় কোনো দেশ? মোটা হবে জব্বার?
এখন সংসদের সামনে প্রশ্ন- কাল প্রাতের সূর্য ওঠা সফল হবে কার?
পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতবে অস্ট্রেলিয়া? নাকি রাবার্ট ব্রুসের মতো সপ্তম বারের চেষ্টায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ওঠা উজ্জীবিত নিউজিল্যান্ড?