আইসিসির মতে এ পর্যন্ত হওয়া সব বিশ্বকাপের মধ্যে ‘সবচেয়ে জনপ্রিয়’ এটাই। আর সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের বেশিরভাগই চেয়েছিল এবারের ট্রফিটা নিউ জিল্যান্ড জিতুক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যোগ্য দল হিসেবেই নিজেদের ইতিহাসেব্যাটিং গভীরতা, ফিল্ডিং এবং সময় মতো উইকেট নিতে পারা বোলার থাকার দিক দিয়ে মাইকেল ক্লার্কের দলই অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল।
নিউ জিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল; অসাধারণ এই মারকুটে ব্যাটসম্যানরা টুর্নামেন্টে রানের ফোয়ারা ছোটান। ওয়ানডে ক্রিকেট যে বদলে গেছে, এটা খুব ভালোভাবেই বোঝাতে পেরেছেন তারা।
প্রথাবিরোধী শটের বাহার বেশ দেখা যায় এবার। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের মারকুটে সব ব্যাটিংয়ে মনে হয়েছে ছয় এখন যেন ‘নতুন চার’ হয়ে গেছে। আর দলীয় ৪০০ রান যেন হয়ে গেছে নতুন ৩০০।
বিশ্বকাপের শেষ ছক্কাটি যখন মারা হয়, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে ততক্ষণে শেষ হয়ে যায়। ফাইনাল ম্যাচ শেষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে স্বাগতিকদের জয়োৎসবের হিল্লোল ওঠে।
ব্যাটসম্যানদের এই বিশ্বকাপেও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতেন একজন বোলার। রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে ১০.১৮ গড়ে ২২ উইকেট নেওয়া অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্ট্যার্কের সত্যিই এটা পাওয়া উচিৎ।
নিউ জিল্যান্ডের দুই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদিও ভালো বল করেন। বোল্ট ১৬.৮৬ গড়ে নেন ২২ উইকেট। আর সাউদি ৩১.৪৬ গড়ে নেন ১৫ উইকেট।
আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ অভিষেকটাও দারুণ হয়েছে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বিশ্বকাপ জয় তুলে নেয় তারা। আয়ারল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জিম্বাবুয়েকে হারায়। নকআউট পর্বে যেতে না পারলেও সহযোগী দেশগুলোর পক্ষ থেকে আইসিসির ১০ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনার জবাব দেওয়ার মতো পারফরম্যান্স করেছে তারা।
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপটা এবার একদমই ভালো কাটেনি। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের।
জ্যাসন হোল্ডারের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ আটে উঠেছে ঠিক, তবে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেয় তারা। নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল সেই ম্যাচে অপরাজিত ২৩৭ রান করেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে ক্রিস গেইলের করা ২১৫ রানের রেকর্ডটি ভাঙেন গাপটিল। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে এই দুটি দ্বিশতকই আছে।
রেকর্ড ভাঙা-গড়ার বিশ্বকাপে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় তুলে নেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা। টানা চারটি শতক করেন তিনি। এর আগে ওয়ানডেতে এই কীর্তি কেউ গড়তে পারেননি।
বিশ্বকাপের শুরুটা হার দিয়ে করে পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচেও হারে তারা। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা চারটি ম্যাচ জিতে অল্প সময়ের জন্য হলেও বিরানব্বই বিশ্বকাপের পাকিস্তানকে মনে করিয়ে দিয়েছিল মিসবাহ-উল হকের দল। তবে কোয়ার্টার-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় তারা।
বিশ্বকাপের আগের বাজে অবস্থা পেছনে ফেলে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। তবে ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়নরা সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের অদম্য রূপটা আর ধরে রাখতে পারেনি।
নিজেদের পিঠে সেঁটে থাকা ‘চোকার্স’’ শব্দটি এবার ছেটে ফেলার প্রত্যয় নিয়ে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কাজটা প্রায় করে ফেলেছিল ডি ভিলিয়ার্সের দল। কিন্তু সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর লড়াই উপহার দিয়ে বিদায় নেয় তারা।
অস্ট্রেলিয়ার আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আমেজেই শেষ হতে পারত এবারের বিশ্বকাপ। কিন্তু গত রোববারের ফাইনালের আগের দিন মাইকেল ক্লার্ক ঘোষণা দেন, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ইতি টানবেন তিনি। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আনন্দের সঙ্গে তাই বিদায়ের সুরও মিশে ছিল। পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছে। REPORT:jamilur Rahman