বরগুনা সদর উপজেলা ঢালভাঙা গ্রামে মিরাজ (১৮) নামের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ৪র্থ শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে। পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবী, পুর্বশত্রুতার জেরে ওই ধর্ষন চেষ্টার বানোয়াট গল্প সাজিয়ে মিরাজকে ফাঁসানো হয়েছে। অভিযুক্ত মিরাজ বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যলয় কলেজের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সে ডালভাঙা গ্রামের আবদুল জলিল আকনের ছেলে।
গত ২৩ মার্চ ডালভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে ছাত্রীর মা পারভীন আক্তার বাদী হয়ে মিরাজের বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে বরগুনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেণ। ২৫ তারিখ বরগুনা থানার এসআই মোতালেব জোমাদ্দার আসামীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আদালতে মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। মিরাজকে গ্রেফতারে পর ওই এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের স ার হয়েছে। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী বৃহষ্পতিবার সকালে মিরাজের বিরুদ্ধে দায়েরকরা মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
এলাকাবাসীর দাবী, মিরাজ নির্দোষ। তাকে ধর্ষণ চেষ্টার বানোয়াট গল্প সাজিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। বাদীপক্ষ এর আগেও এ ধরণের গল্প সাজানো ঘটনায় লোকজনকে ফাঁসিয়ে টাকা পয়সার হাতিয়ে নিয়েছে। এটা তাদের একপ্রকার ব্যবসা। ওই এলাকার সংরক্ষিত আসনের নারী ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার ছবি বলেন, মিরাজ এ ঘটনা ঘটনোর মত ছেলে না।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল হক বলেন, মামলার বাদী পারভীন, গোলেনুর ও বাগ-ই নুর তিন বোন। এই তিন বোন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় অসামাজিক কর্মকান্ড করে আসছে। এটা এক প্রকার ব্যবসা। অর্থাত, কারো কাউকে ফাঁসানোর দরকার হলে এদেরকে ব্যবহার করা হয়। এরপর সালিশ মিমাংসার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করে ভাগাভাগী করে নেয়া হয়। এতে সাপও মরে আর লাঠিও ভাঙেনা যেমন, তেমনি অর্থনৈতিক সুবিধাও আদায় হয়। মিরাজ ও এমন ঘটনার শিকার। মিরাজের বিরুদ্ধে কারো শত্রুতার শোধ নিতেই পারভীনদের ব্যবহার করা হয়েছে। অপর এক সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল হামিদ বলেন, মুলত তাকে উদ্দেশ্যমুলক ফাঁসানো হয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিল মিরাজের অনার্স ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় তার লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটানোর জন্যই এ সময়য়ে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে ওই ইউপি সদস্য বলেন, নির্দোষ কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে যাতে তাকে হয়ারানী না করা হয় আমি এমন অনুরোধ জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মামলা বানিজ্যের মাধ্যমে সাধারণকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কারো সাথে বিয়ে করে যৌতুক মামলা, কারো বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানা ও আদালতে মামলা দায়েরের পর অর্থ হাতিয়ে নেয়াই মুলত এদের পেশায় পরিনত হয়েছে। মান সম্মানের ভয়ে এলাকাবাসী প্রতিহত করার সাহস পায়না। মাস তিনেক আগে পোটকাখালীর খবির সর্দারের , মোল্লার হোরা এলাকার আবুল হোসেন ও ডালভাঙা এলাকার পনু মালের বিরুদ্ধে চক্রটি মোট ৫টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলার নথীতে দেখা যায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওই তিনজনই বাদী ও স্বাক্ষী।
মিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার নং স্বাক্ষী নাছিমা বেগমের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে বলেন, আমি এ ঘটনার কিছু জানিনা, কিছু দেখিনি। পাঁচ নং স্বাক্ষী কামাল বলেন, ঘটনা জানা তো দূরে থাক, আমি নিজেই জানিনা যে আমি এ মামলার স্বাক্ষী।
এ ব্যাপারে ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ আজিজুল হক স্বপন বলেন, ঘটনার পর ভিক্টিমসহ অভিভাবক আমার কাছে আসে। ঘটনার বিবরণ শোনার পর বিষয়টি আমি বরগুনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাই। যেহেতু ভিক্টিম পরিবার বিচারের জন্য এসেছে এবং বিষয়টি ¯্রফে আইনী সে কারণে আমি তাদের বরগুনা থানায় পাঠিয়ে দেই। পরে তারা মামলা দায়ের করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জমাদ্দার মুঠোফোনে বলেন, মামলার পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহ করেছি। যেহেতু বিষয়টি ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ, সে কারণে আমি ভিক্টিমের সাথে কথা বলেছি। ভিক্টিমের বক্তব্যে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।