ভোলা সদর হাসপাতালে চলছে চিকিৎসকের তীব্র সংকট। এর মধ্যেও চিকিৎসকেরা অনুপস্থিত থাকছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা। চিকিৎসক সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না ভোলা হাসপাতালের। প্রায় ১৫ বছরেও মেলেনি ১শ’ শয্যার ভোলা সদর হাসপাতালে জনবল। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাঁরা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা, এতে করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন তারা।
ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কিন্তু বাড়তি লোকবলের অনুমোদন এখনো মেলেনি তাড়া। ৫০ শয্যায় বহির্বিভাগ ও আন্তবির্ভাগ মিলিয়ে ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ৬ জন আছেন। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ৪ জন স্ত্রী রোগ (গাইনি), চক্ষু, শিশু ও সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মেডিসিন, কার্ডিয়াক, অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব আছে। নেই কোনো আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা।
সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে অপেক্ষা করছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের কক্ষ খোলা থাকলেও সেখানে চিকিৎসক-কর্মচারী কেউই ছিলেন না। ভোলা উপ টাউন বাংলাবাজার থেকে আসা মিরাজ আহম্মেদ ও তাঁর স্ত্রী শিশুকে টিকা দিতে এসেছেন। এক ঘণ্টা ধরে তাঁরা মহিলা বিভাগের ইপিআই কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন।
মিরাজ আহম্মেদ বলেন, ‘বুঝতে পারছি না, ডাক্তার আসবেন কি না। কোনো কর্মচারীকেও দেখছি না যে জিজ্ঞাসা করব।’ উত্তর দিঘলদী বালিয়া থেকে আসা আড়াই বছরের শিশু কামরুল ৫ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। তার বাবা আবুল কালাম বলেন, সকাল ৮ থেকে তিনি হাসপাতালে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২ ঘণ্টা পার হলেও চিকিৎসকের দেখা পাননি।
হাসপাতালের শিশু ও পুষ্টি ওয়ার্ডে শিশুদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসক ঠিকমতো এ ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে আসেন না। মাত্র ২ জন সেবিকা এতগুলো শিশুর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁরা জানান, এ ওয়ার্ডের শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছুটিতে আছেন।
গাইনি ওয়ার্ড, মহিলা সার্জারি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ড, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড, পুরুষ মেডিসিন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড, পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী ও অভিভাবকেরা বলেন, চিকিৎসক দিনে একবার পরিদর্শনে আসেন। তা বেশির ভাগ সময় সকালের দিকে। বেলা ১১টার পর কেনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তিনি পরের দিন সকালে চিকিৎসকের সেবা পান।
প্রেষণে আসা চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্যাহ-আল-মামুন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৬ শতাধিক রোগী আসে। তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ, এম ফারুকুর রহমান ও নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব এস এম বাহাউদ্দিন বলেন, বদলি হয়ে আসার আগেই চিকিৎসকেরা যাওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। এখানে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা ঢাকাসহ বড় শহরে চলে যান। কারও কোনো জবাবদিহি নেই।
ভোলা জেলা সিভিল সার্জন ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ ভোলা সদর হাসপাতালসহ পুরো জেলাতেই চিকিৎসক-সংকট চলছে। যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু টেকনিশিয়ান নেই। আমরা চেষ্টা করেও চিকিৎসক ভোলায় আনতে পারছি না।’ ভোলা সদর হাসপাতালে চলছে চিকিৎসকের তীব্র সংকট। এর মধ্যেও চিকিৎসকেরা অনুপস্থিত থাকছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা। কারণ চিকিৎসক সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না ভোলা হাসপাতালের। প্রায় ১৫ বছরেও মেলেনি ১শ’ শয্যার জনবল। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাঁরা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা, এতে করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন তারা।