অবশেষে নানা জটিলতায় চালু হলো না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট ডট অর্গ (ফ্রি ইন্টারনেট)। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ‘ফ্রি ইন্টারনেট সেবা’ দিতেই ইন্টারনেট ডট অর্গ মঙ্গলবার চালুর কথা ছিল। কিন্তু কোনো কোনো পক্ষের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলেন জানা গেছে।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (অাইসিটি) বিভাগ সূত্রে মঙ্গলবার ‘ইন্টারনেট ডট অর্গ’ চালু না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। শিগগিরই ফ্রি ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় একটি সূত্র।
সূত্রটি জানায়, ‘ফ্রি ইন্টারনেট’ চালুর সব প্রক্রিয়া গুছিয়ে অানার পরও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বিশেষ করে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি এখন দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়েছে। এদিকে অাজ রাতেই ঢাকা এসে পৌঁছবেন ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্পের পণ্য বিপণন বিভাগের প্রধান ড্রু ট্রং। মূলত ‘ফ্রি ইন্টারনেট’ প্রকল্প চালুর জন্যই তার ঢাকা সফর। মূল কর্মসূচি চালু না হওয়ায় এ সময় তিনি ‘ফ্রি ইন্টারনেট’ সেবার পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অালোচনা এবং নতুন পার্টনারের সন্ধান করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্প চালুর সঙ্গে সরাসরি জড়িত পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিকদের জানান, মূলত মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর অসহযোগিতা এবং অনাগ্রহের কারণে ঘোষণা দিয়েও নির্দিষ্ট দিনে ‘ফ্রি ইন্টারনেট সেবা’ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও অাগেই জানা গিয়েছিল, কেবল মোবাইল অপারেটর রবি ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করতে অাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু অন্য অপারেটররা এখনও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেইন জানান, ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্পের সঙ্গে গ্রামীণফোনের অালাপ-অালোচনা চলছে। এর সঙ্গে ‘রেগুলেশন’ সম্পর্কিত বিষয়গুলো জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, অামরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিঅারসির কাছে ‘রেগুলেটর ক্ল্যারিটি’ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। বিটিঅারসির কাছ থেকে জবাব পাওয়ার অাগে অামরা এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারব না।
অারেক অপারেটর বাংলালিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিম্পেলকমের সঙ্গেড় ফেসবুকের অালোচনা চলছে। গ্রুপ পর্যায় থেকে এখনও সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্পে যেতে পারছে না বাংলালিংক।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটরগুলো ‘বিজনেস মডিউল’-এর কথা চিন্তা করে ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্পে যেতে তাদের অাপত্তি ও অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে বিটিঅারসির চেয়ারম্যানের কাছে। বিটিঅারসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস যদিও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তর কথা জানাননি। এ মুহূর্তে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এর অাগে ইন্টারনেট ডট ওঅারজি প্রকল্পের একটি টিম বাংলাদেশে ‘প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে’ কাজ করে যায়। ওই কাজের তদারকি করেন প্রকল্পের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমন্বয়কারী দিপ্তি গোরে। টিমটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুঅাই) প্রকল্প, ২০টি এনজিও, দুটি জাতীয় দৈনিক, মোবাইলফোন অপারেটরসহ অারও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা চালুর ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইন্টারনেট ডট ওঅারজি কর্তৃপক্ষকে।
এ সেবা চালুর অগ্রগতি বিষয়ে এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী জানান, শুরুতে ন্যাশনাল পোর্টাল বা জাতীয় তথ্য বাতায়ন ইন্টারনেট ডট ওঅারজির মাধ্যমে দেখা যাবে। পর্যায়ক্রমে সব পোর্টাল, সাইট এই সেবার অাওতায় চলে অাসবে।
প্রসঙ্গত, কেউ যদি ইন্টারনেট ডট অর্গে লগ-ইন করে ‘চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার’ সেবা পেতে চায়, তাহলে তার কোনও ইন্টারনেট চার্জ লাগবে না। ইন্টারনেট ডট ওঅারজিতে সরাসরি না ঢুকে কেউ যদি অ্যাপের মাধ্যমে এটি ব্যবহার করতে চায়, তাহলেও এই সেবা বিনা খরচে ব্যবহার করা যাবে।
ইন্টারনেট ডট অর্গ মানে কিন্তু বিনামূল্যের ইন্টারনেট না এবং এটা একেবারেই নতুন একটি ধারণা নয়, কেবল পুরোনো ধারণার এগ্রিগেশন বলা যায়। জিরো ফেসবুক আর জিরো উইকিপিডিয়াকে একত্রিত করে সেখানে আরও কয়েকটি কন্টেন্ট প্রোভাইডারকে জুড়ে দিলে যা হবে তাই হলো সহজে ইন্টারনেট ডট অর্গ। আরও কিছু ব্যাখ্যার দরকার আছে। তবে এটুকুতে বোঝা যায যে, ফ্রি টা ইন্টারনেট না, ফ্রি হলো এর মাধ্যমে কিছু কিছু কন্টেন্ট (এবং সার্ভিসের) জন্য ডেটা খরচ হবে না, মোবাইলে। সহজে বোঝার জন্য বলা হয়ে থাকে ফ্রি বা বিনামূল্যের ইন্টারনেট।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে (ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত) মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ২৬ লাখ ৫৬ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ১৯ লাখ ৫৯ হাজার। আর দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বাইরে রেখে ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্প চালু করা হলে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই এই সেবার বাইরে থেকে যাবে ।