,নাশকতা ও খুনখারাবির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশ ধ্বংসের চেষ্টার’ সঙ্গে জড়িতরা বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না।
শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি বলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত মানে ধ্বংস্, বিএনপি জামায়াত মানে খুনখারাবি। এই খুনের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। যারা বাসে-ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, যারা এই দেশকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে, তাদের কোনও ক্ষমা নাই। তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে।”
আওয়ামী লীগের নেতৃতে দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “এরা মানুষের বন্ধু না, এরা শত্রু। এরা মানবতার শত্রু; মানবতার বিরুদ্ধে কাজ করে।”
সমাবেশে বাধা পেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে একটানা অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া। বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা ৯২ দিনের অবরোধে দেশের বিভিন্নস্থানে গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা ও সহিংসতায় প্রায় ১৫০ জন মানুষ প্রাণ হারান।
প্রধানমন্ত্রী অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমা হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, হরতালে-অবরোধে খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। খালেদা জিয়ার কাজ হলো গরিবের পেটে লাথি মারা। এটাই তারা করেছে।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে আওয়ামী লীগের ‘হাতকে’ শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “যারা ধ্বংসের রাজনীতি করে তাদের পরিহার করেন। তাদের না বলেন। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হন। উন্নয়নের রাজনীতিতে শামিল হন।”
বক্তব্যে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এর আগে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত জনতার ওপড় পুলিশের গুলিতে ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“সেই বিদ্যুতের দাবিতে মানুষ মৃত্যুবরণ করলো। আর আমরা ক্ষমতায় এসে আপনাদের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে দিলাম। ২০১৩ সালে বিএনপি সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। বিদ্যুৎ দিতে পারে না, কিন্তু পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।”
“বিএনপি মানেই ধ্বংসের রাজনীতি করা, জামায়াত মানেই ধ্বংসের রাজনীতি করা।”
এ সময় উত্তবঙ্গে মঙ্গা দূর কথার কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপির সময় উত্তরবঙ্গে মঙ্গা ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মঙ্গা থাকে না। আজকে কোথাও মঙ্গা নেই।”
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, ভূমিহীনদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া, অবকাঠামোসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ ভালো থাকবে, সুখে থাকবে সেটা আমরা চাই। সে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
বিএনপি-জামায়াতকে ভবিষ্যতে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “খুনিরা কোনও ভোট পেতে পারে না, খুনিদের কোনও সমর্থন থাকতে পারে না। আপনাদেরও সেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, যারা মানুষ হত্যা করেছে, পেট্রোল বোমা মেরেছে, তাদের আর ভোট না। আর তাদের দল না।”
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে ৪০ বছর আমাদের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক সাফল্য এটাই যে, ভারত তাদের সংসদে স্থল সীমান্ত চুক্তি পাশ করে তাদের সংবিধান সংশোধন করেছে। এটা বাংলাদেশের একটা বিরাট অর্জন।
“আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করে। আর বিএনপি-জামায়াত? বিরোধীদলে থাকলে মুখে ভারতবিরোধী কথা, আর ক্ষমতায় গেলে ভারতের চাটুকারিতা করে। এটাই তাদের চরিত্র।”
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তি, গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারত থেকে ৬৪ হাজার শরণার্থী ফিরিয়ে আনার সফলতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
ব্রিটিশ নির্বাচনে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করবেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আমরা সাফল্য দেখাচ্ছি।
“আরেকটা দিক তাকিয়ে দেখুন। বিএনপির নেত্রী ১৯৮১ সাল থেকে সরকারে কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তার দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাবে। কি পড়াশোনা করিয়েছেন? সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ড্রাগ এইগুলি পড়িয়েছেন। তার ছেলে থাকে লুকিয়ে, এটাই তাদের চরিত্র।”
এর আগে বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যান প্রধানমন্ত্রী।
চাঁপাইনবাগঞ্জে পৌঁছে বেলা ১টায় সদর উপজেলার সাহেবের ঘাট এলাকায় মহানন্দা নদীর উপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৫শ’৪৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ঘুরে দেখেন তিনি।
সেতু উদ্বোধনের পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (যুব ভবন), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উপকেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির চক্ষু হাসপাতাল, শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের একাডেমিক ভবন এবং গোমস্তাপুরে নবনির্মিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উদ্বোধন করেন তিনি।
এরপর বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল, কানসাট-রহনপুর-ভোলাহাট সড়ক উন্নয়ন, পদ্মা নদীর ভাঙন হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আলাতুলী এলাকা রক্ষা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শেখ হাসিনার সমাবেশে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সমাবেশ স্থলের আশেপাশের এলাকাতেও মাইক লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা করা হয়।
সেতু উদ্বোধন ও জনসভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) ও সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ উত্তরবঙ্গের অন্যান্য সংসদ সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দিন মণ্ডল, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী ও উপ-প্রেসসচিব মামুন-অর-রশীদ প্রমুখ