কেবল মাত্র প্রাইভেট না পড়ার অপরাধে একাদশ শ্রেণির ক্লাশের মেধাবী এক ছাত্রকে বার্ষিক পরীক্ষায় (প্রমোশন টেস্ট) ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নুরুল হুদা নামের এক শিক্ষক ওই ছাত্রকে গণিত ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে ক্ষোভ মেটায়। ওই মেধাবী ছাত্র নুরুল হুদা নামের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ে অন্য শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েছিল বলে তাকে ফেল করানো হয়েছে। অথচ ফেল করে দেওয়ার পরও ওই ছাত্র সকল বিষয়ে সব পরীক্ষার্থীর চেয়েও বেশি নম্বর পেয়েছে। বিষয়টি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ডিগ্রি কলেজের ঘটনা এটি।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মে’ মাসে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল গত শনিবার প্রকাশ করা হয়। এতে মেধাবী আব্দুল্লাহ আল মামুন গণিত বিষয়ে ফেলসহ তার ফলাফলও স্থগিত দেখানো হয়। এর কারণ খুঁজতে জানা গেছে, প্রাইভেট না পড়ার অপরাধে গণিত বিষয়ের শিক্ষক নুরুল হুদা ওই ছাত্রকে ফেল করিয়ে দেওয়াসহ তার ফলাফলও স্থগিত করে। একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ১১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে গণিত বিষয় ব্যতিত ৭ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন ৫৩৯ নম্বর পায়। তার চেয়ে বেশি নম্বর কোনো শিক্ষার্থীও পায়নি। আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। এসএসসি পাশের পর রাজীবপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয় সে।
রাজীবপুর উপজেলার চাঙ্গালিয়া পাড়া গ্রামের আব্বাস আলীর পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি সকল বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। ব্যবহারিক পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। তবে গণিত বিষয় ওই স্যারের (নুরুল হুদা) কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারনে স্যার আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ক্লাশে আমার ওপর সব সময় রাগ করত। বলত দেখি তোমার ব্যবহারিক পরীক্ষায় কে নম্বর দেয়। আব্বাস আলী অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা ক্লাশে ভালোভাবে পড়ায় না। ওনাদের খালি প্রাইভেট-কোচিং। প্রায় সব শিক্ষকই এখন প্রাইভেট ব্যবসায় নেমেছেন। সব শিক্ষক বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য পৃথক কক্ষ করে নিয়েছে। এটা বন্ধ করা না গেলে কলেজে লেখাপড়া হবে না। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। আর সেই শিক্ষকই শুধুমাত্র প্রাইভেট না পড়ায় অন্যায়ভাবে একজন শিক্ষার্থীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। আমার তো মনে হয় উনি শিক্ষক নামের কলঙ্ক। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজর এক শিক্ষক জনান, প্রতিষ্ঠানটিতে এইচএসসি ও স্নাতক ভালো ফলাফল হলেও ১০/১২ জন শিক্ষক রয়েছে যারা কলেজে সময় না দিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট কোচিংএ। ওই শিক্ষকরা ক্লাশে আন্তরিকভাবে পাঠদান করান না। প্রাইভেট পড়া নিয়েও প্রতিযোগিতা হয়। আর প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় নকলের সহযোগিতা করেন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া উচিত্।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি তাকে ফেল করাইনি। সে লিখতে পারেনি তাই ফেল করেছে। আমি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই এটা সত্য। ওই ছাত্র যে আমার কাছে প্রাইভেট পড়েনি আর এ কারণে পরীক্ষায় খারাপ করেছে এটাও সত্য।’
কলেজের অধ্যক্ষ ইউনুস আলী জানান, ওই ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। সেটা তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বাজারে প্রকাশ্যে শিক্ষককে লাঞ্জিত করার ঘটনাটি খুব খারাপ হয়েছে