ব্লগার নিলয় হত্যায় চার যুবক জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী আশামনি। তিনি জানান, চার যুবকের মধ্যে একজনের কাছে পিস্তল ও তিন জনের কাছে রামদা ছিল। তাদের একজনের মুখে দাড়ি ছিল। হত্যার সময় তিনি ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানান আশামনি।
শুক্রবার বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের নিলয় হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে আমার স্বামী বাজার থেকে ফিরে ড্রয়িং রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসেন। এসময় আমি ছাড়াও আমার ছোটবোন তন্বী ছিলাম বাসায়। এমন সময় হঠাৎ করে ২০-২১ বছর বয়সী জিন্সের প্যান্ট পরা এক যুবক দরজা খুলতেই বাসায় ঢোকেন। তিনি বাসা ভাড়া নেবেন বলে নিজ থেকেই দু’বার পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে দেখেন।’
আশামনি বলেন, ‘এরপর আমি বলি, আমরা তো বাসা ছাড়ছি না, বাসা ভাড়া নেবেন কীভাবে? বাড়িওয়ালাকেও তো এ বিষয়ে কিছু বলিনি। এসময় ওই যুবক বলেন, ‘বাড়িওয়ালাই আমাকে দেখে যেতে বলেছেন। একথা বলে হাতে মোবাইলেও যেন কী যেন করছিলেন।’
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি ড্রয়িং রুমে আমার স্বামীকে জানাতে যাই। এর মধ্যে আরও তিন যুবক বাসায় ঢোকেন। এদের একজনের মুখে দাড়িও ছিল। তারা ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেন। তিনজন যুবকের হাতে রামদা ও একজনের হাতে পিস্তল ছিল।’
আশামনি বলেন, ‘একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বারান্দায় রেখে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়। একইভাবে অন্য রুম থেকে তন্বীকেও এখানে নিয়ে আসে। এরপর এক সঙ্গে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায় তারা। বারান্দায় আমি বারবার ‘বাঁচাও, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি আমার স্বামীকে বাঁচাতে।’
শুক্রবার রাজধানীর গোড়ানে বাসায় ঢুকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার নিলয় নীলকে জবাই করে হত্যা করা হয়। নিহত নিলয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। গত ৩ আগস্ট তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে হত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
নিলয় হত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ধরণ আর কৌশল দেখে মনে হচ্ছে এর আগে ব্লগার অভিজিৎ রায়, আশিকুর ও অনন্ত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সেই গ্রুই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
এদিকে নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (এআইকিউএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। ই-মেইলে পাঠানো সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আনসার আল ইসলাম (আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) এর মুজাহিদিনরা হামলা চালিয়ে আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসুলের দুশমন নিলয় চৌধুরীকে হত্যা করেছেন। আমরা প্রতিশোধমূলক এই হামলার দায়ভার গ্রহণ করছি।’