মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
কুরবানী উপলক্ষে মানিকগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে পারিবারিকভাবে ষাড় গরু পালন করা
হচ্ছে। ঈদের সময় গরুগুলো রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে ওঠানো হবে। তবে এ জেলার ষাড় গরুর চাহিদা অন্য জেলার চেয়ে বেশি বলে দাবী করেন গরুর খামার শ্রমীকরা।
এবার কোরবানিকে সামনে রেখে জেলায় মোট ৪৯ হাজার ২০৫টি গরু, ৪৯৭টি মহিষ, ৩৬ হাজার ২০৩টি ছাগল ও ১১ হাজার ৫২৭টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে।
তবে মানিকগঞ্জে বড় ধরনের কোনো খামার না থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে পারিবারিকভাবে কৃষকরা ও কিছু ক্ষুদ্র খামারি এসব পশু প্রতিপালন করছেন। এসব পরিবারের সংখ্যা অন্তত ২৪ হাজার ৩৮১টি। এরমধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৫ হাজার ৪৪৪টি পরিবার ১১ হাজার ৭৩৩টি গরু, ১৫৭টি মহিষ, ৮ হাজার ২৮৪টি ছাগল ও ১ হাজার ৩৮৫টি ভেড়া প্রতিপালন করছেন।
শিবালয় উপজেলায় ২ হাজার ২৭৭টি পরিবার ৭ হাজার ২৪৫টি গরু, ১৭টি মহিষ, ৪ হাজার ২৫টি ছাগল, ৩ হাজার ১৩৩টি ভেড়া পালন করছেন। সাটুরিয়া উপজেলায় ৫ হাজার ১৭৫টি গরু, ৩ হাজার ৪৫০টি ছাগল ও ১ হাজার ৩৮০টি ভেড়া পালছেন ৪ হাজার ৪০৪টি পরিবার। ঘিওর উপজেলায় ৩ হাজার ২৪টি পরিবারে চলছে ২ হাজার ৯৯০টি গরু, ২৩টি মহিষ, ৪ হাজার ২৫টি ছাগল, ১ হাজার ৪৯৫টি ভেড়ার পরিচর্যা। সিংগাইর উপজেলায় ৬ হাজার ৬টি পরিবারে ১৪ হাজার ১৭৩টি গরু, ২৮৯টি মহিষ, ৮ হাজার ৬৫৭টি ছাগল ও ২০১টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে। হরিরামপুর উপজেলায় ১ হাজার ২১৯টি পরিবার ২ হাজার ৩০০টি গরু, ১ হাজার ৭২৫টি ছাগল ও ৩৪৫টি ভেড়া প্রতিপালন করছেন।
এছাড়া দৌলতপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৪১১টি পরিবারে ৫ হাজার ৫৮৯টি গরু, ১১টি মহিষ, ৬ হাজার ৩৭টি ছাগল, ৩ হাজার ৫৮৮টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের অফিস সহকারী আফতাব আলী এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ বছর কোরবানির গরুসহ পশুর সম্ভাব্য হিসাব চায় প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ফলে তারা জেলার প্রত্যেক উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৩ জন করে মাঠকর্মী নিয়োগ দেন। এসব মাঠকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোরবানির পশুর সংখ্যা গণনা করেছেন।
এদিকে, সবুজ ঘাস, খড়, কুঁড়া. ভূষির পাশাপাশি অনেকেই বাড়তি লাভের আশায় পশুকে অধিক মোটাতাজা করতে ভিটামিন জাতীয় নানান ইনজেকশন দিচ্ছেন ও ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে সরেজমিনে অধিকাংশ কৃষক পরিবারই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
মানিকগঞ্জ ঘিওর উপজেলার করচাবাঁধা গ্রামের মোঃ খলিল মোল্লা জানান, তিনি কোরবানি উপলক্ষে বাড়িতে ২টি গরু পালন করছেন। রোজার ঈদের পরপরই ওই গরু গুলোকে কাঁচা ঘাস ও খড়ের পাশাপাশি প্রতিদিন একেকটি গরুর জন্যে ৪ কেজি ভূষি, ২৫০ গ্রাম খৈল ও পরিমাণমতো ভাঙা চালের ভাত খাওয়ানো হচ্ছে। এতে তার প্রায় ও মণ ওজনের প্রতিটি গরুর জন্যে দৈনিক ব্যয় হয় ১৫০ টাকার মতো। গরুকে অধিক মোটা করতে কিছু খাওয়ানো হয় কিনা জানতে চাইলে তার প্রতিবেশী মোঃ লাল চাঁন মাতাব্বর বলেন, শুধু কাঁচা ঘাস আর খড় খাওয়ালে গরুর ওজন তেমন বৃদ্ধি পায়না। তাই বাধ্য হয়েই ভিটামিন জাতীয় কিছু ট্যাবলেট খাওয়ান তিনি। তবে ওই ট্যাবলেট পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ানো হয় বলে দাবি তার।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আবদুল হালিম জানান, এবার জেলায় কোরবানির জন্য প্রচুরসংখ্যক গবাদিপশু পালন করা হচ্ছে। তবে গরু মোটাতাজা করতে কোনো ট্যাবলেট ও ইনজেকশন না দিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে গরু মোটাতাজার উদ্দেশে ভেজাল ইনজেকশন দিলে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরপরই গরু মারা যেতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে গরু মোটাতাজার জন্য কিছু ভিটামিন ট্যাবলেট ও ইনজেকশন রয়েছে, যা গরুর জন্যে ক্ষতিকর নয়। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মোতাবেক সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।