আসছে কোরবানী ঈদ। বাংলাদেশে মানুষ ঈদ করবে এই কথা ভেবেই আমার আজকের লেখা। এদেশের উচ্চ বৃত্তরা সবাই গরু, ছাগল নিয়ে ব্যস্ত। দরিদ্র মানুষ আশায় আছে পাশের বাড়ী কে কোরবানী দেবে সেই হিসাব নিয়ে। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা ঈদ এর দিন কারো কাছে চাইতেও পারবেনা- এক কেজি মাংস কিনে ছেলে মেয়ে নিয়ে খেতেও পারবেনা।
আসলে আমি কোন ইসলামী চিন্তাবিদ নই যে, আপনাদের সামনে বড় বড় ইসলামী যুক্তি দেব। আমি এক সাধারণ মুসলমান, আল্লাহ আমার সৃষ্টিকর্তা, আর রাসূলে করিম (সাঃ) আমার নবী বা রাসূল, আল্লার হাবিব। আমি সোজা হিসাব বুঝি আর সেটাই আজ বলবো। কোরবানী শব্দের অর্থ ত্যাগ। আমার ভিতরের অমানুষটাকে, অর্থলোভ, সম্পদের লোভ, নারীর লোভ, ক্ষমতার লোভ, প্রতি হিংসার আকাঙ্খা, সন্ত্রাস নির্যাতনের আকাঙ্খা, মাতুব্বরীর ইচ্ছা এক কথায় সব অপকর্মের আকাঙ্খাকে কোরবানী দেওয়াই হলো কোরবানী ঈদ। অর্থাৎ একজন মুসলমান কোরবানী দেবার পর সে হয়ে যায় পবিত্র ও নিস্পাপ। সে হয়ে যায় সঠিক ইমানদার। যার নাম “আশরাফুল মাকলুকাত”।
কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানদের অবস্থা ভিন্ন রূপ। এদেশে কালো টাকার মালিক যারা, এদেশের অসৎ অর্থ উপার্জনকারী মানুষ বড় বড় পশু ক্রয় করে কোরবানী দেবে। যত তারাতারি সম্ভব তার নিজ ফ্রিজে মাংস ভর্তি করে। তার বাড়ীর গেইট বন্ধ করে হাড় হাড্ডি যা থাকে সেগুলো গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে বিলি করবে। তারপর এই মাংস বিতরণের দৃশ্য আমরা সকলেই দেখি এমন কি অনেক দুর্ঘটনাও দেখি। মোট কথা এটা ইসলামের নিয়ম মেনে কেউ আমরা কোরবানী করিনা বিলি বন্টনেও আমরা সচেতন নই।
শুধু তাই না এদেশের ৩য় শ্রেণীর মানুষগুলো যারা হাত পাততেও পারেনা, চাইতেও পারেনা। তাদের খবর কেউ নেয় না। হায়রে মুসলমান! আবার দাবী করে এবার আমি বড় গরু কোরবানী দিয়েছি, আবার অনেক মাওলানা সাহেবরা বলেন- এ বছরের কোরবানীর মাংস পরের বছর খাওয়া নাকি অনেক সোয়াব। তাই সারা বছর ধরে ধনীর বাড়ীতে কোরবানীর মাংস খেতে খুব স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
পাঠক প্রতি বছর এদেশে সৌদি আরব থেকে যে দুম্বার মাংস আসে সেগুলো ঐ ‘চোরের গোষ্ঠি’ খেয়ে ফেলে এদেশের গরীব মানুষ ভাগে পায়না। তবে পাঠক আমার ভগ্নিপতি একজন জেলা প্রশাসকের পিএ তার বাসায় অনেক বছর আগে একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম দেখলাম ফ্রিজ ভর্তি দুম্বার মাংস রান্না হলো খেয়েও দেখলাম জীবনে প্রথম শেষ বারের মত। এই হলো দেশের অবস্থা। পাঠক সত্য ও ঘটনাটি তুলে ধরলাম এই কারণে যে সারা দেশের অবস্থা এমন। এবার আমরা কি তাহলে মুসলমান হতে পেরেছি? আসলে আমরা সবাই আধা মুসলমান। লেবাছি মুসলমান। আমরা যদি সত্যি মুসলমান হতাম এবং রাসূলের (সাঃ) বিধান মানতান তাহলে আমাদের মধ্যে কোন মুসলিম ভাই গরীব থাকতোনা, থাকতে পারেনা। কারণ আমরা দেশের কঠোর আইন থাকা সত্বেও সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিতে সবাই আমরা প্রথম সারির ওস্তাদ। আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন এর কোন পেটোয়া বাহিনী দুনিয়াতে নাই। তাই যাকাত আদায়ের বিষয় আমরা ৯৯% শতাংশ আদায় করিনা। পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন করিনা।
আমরা কিসের ইসলামের দাবিদার। আমি নিজেও বুঝিনা। মহল্লার মসজিদে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়ি কিন্তু রাস্তায় দেখা হলে কেউ কাউকে সালামও দেই না, খোজ খবর নেওয়াতো দুরের কথা। ঢাকা শহরে পাশের বাড়ী আনন্দ অনুষ্ঠান আর এক বাড়ীর মৃত্যুর কান্নার রোল এই হলো বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ।
তাই বাংলাদেশের মুসলমান ভাইদের বলবো- সাবধান! যে কোন মুহুর্তে মৃত্যুর পরোয়ানা এসে যাবে। তুমি যেই হও! এক সেকেন্ডও সময় পাবেনা তুমি যত বড়ই ক্ষমতাধর হওনা কেন। তাই আসুন সকল মুসলমান ভাইয়েরা আমরা সবাই রাসূলে করিম (সাঃ) উম্মত হয়ে ধর্মের বিধানকে সম্মান করে সুন্দর ভাবে কোরবানী ঈদ পালন করি। এই পবিত্র সুন্দর দিনটাকে যেন আমরা পশু হত্যা দিবস না বানাই। -সবাইকে “ঈদ মোবারক”