দেশে লেবুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় কৃষকদের কাছে লেবু চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়। ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এবং লেবু চাষ ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় দেলদুয়ারের কৃষকদের লেবু চাষের দিকে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। ফলে ধান চাষের জমিগুলো লেবু চাষের আওতায় আসছে। হঠাৎ করে লেবুর দাম কমে যাওয়ায় চাষীদের চোখে মুখে হাতাশার ছাপ দেখা যায়। বর্তমানে তাদের সেই হাতাশা কাঁটতে শুরু করেছে। লেবুর দাম ভাল হওয়ায় চাষীদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকরা। গুণগত মান ভাল, তাছাড়া সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও লেবুর ভেতর বীজ না থাকায় দেলদুয়ারের লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন পুটিয়াজানী, বিলসা ও লাউহাটী বাজার থেকে পাইকাররা লেবু কিনে ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেলদুয়ারে এবার ৮শ’ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। কিন্তু এ বছর হঠাৎ কওে লেবুর চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে লেবু চাষীরা। দেলদুয়ারে সবচেয়ে বেশি লেবু চাষ হচ্ছে, ফাজিলহাটী ইউনিয়নের ফাজিলহাটী, পুটিয়াজানী, দেলুয়াকান্দি, সাদারিপাড়া, ফুলতারা, টুকচানপুর, এলাচিপুর, কামান্না এবং লাউহাটী ইউনিয়নের লাউহাটি, তাতশ্রী, স্বল্পগুনটিয়া, বিলসা, হেরেন্দ্রপাড়া, বড়টিয়া, তারটিয়াসহ আশে পাশের অনেক গ্রামে। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে লেবু চাষ হচ্ছে। সাদারিপাড়া গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে লোকমান মিয়া বলেন, আমি পাঁচ একর জমিতে লেবু চাষ করেছি। পাইকারি বিক্রি করে প্রতি বছর ৫ লাখ টাকা করে পেয়েছি। কিন্তু এ বছর লেবু বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে লেবুর দাম আবার বাড়তে শুরু করায় আমার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো বলে আশা করছি। পুটিয়াজানী গ্রামের বাসুদেব চন্দ্র সরকার বলেন, আমি এক একর জমিতে লেবু চাষ করেছি। প্রতি বছর মহাজনদের কাছে পাইকারি লেবু বিক্রি করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো পেতাম। কিন্তু এ বছর ২০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছি। ৮০ কেজির ১ বস্তা লেবু আগে যেখানে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো হঠাৎ তা কমে গিয়ে ৫শ’ থেকে ৬শ টাকায় নামে। বর্তমানে প্রতি বস্তা লেবু ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেলদুয়ারের লেবুর পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় চাষীরা লেবুর পাশাপাশি প্রচুর কলম চারা বিক্রি করছেন। লেবু চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল ফাজিলহাটী ও লাউহাটী ইউনিয়নের মাঝামাঝি সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে একটি লেবু প্রসেসিং কারখানা তৈরির। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি দল এসব এলাকা ঘুরে গেছেন। তারা একটি লেমন জুস কারাখানা করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কানিজ সুরাইয়া সুলতানা বলেন, আমাদের সঠিক পরামর্শ, দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতার ফলে দেলদুয়ারে ব্যাপক ভাবে লেবু চাষ হচ্ছে। কৃষকরা লেবু চাষ করে লাভবান হয়েছে। বর্ষাকালে লেবুর চাহিদা কম থাকায় এবং বাজারে লেবুর সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম ছিল। বর্ষাকাল শেষ হওয়ার সাথে সাথেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে লেবু প্রসেসিং কারখানা হলে এবং বিদেশে রপ্তানি করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।