পুরান ঢাকার হোসনি দালান এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এমন ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’-এর ওয়েবসাইটে এ দাবি করা হয়েছে। আইএস-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে খেলাফতের সৈনিকরা বহু ঈশ্বরবাদীদের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’ তবে এই ঘটনার সঙ্গে আইএস-এর কোনো যোগসূত্র নেই বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্রবার রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালান এলাকায় ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১০০ জনের বেশি। শুক্রবার রাত পৌনে দুইটার দিকে হোসনি দালান চত্বরে পরপর তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানান চকবাজার থানার ওসি আজিজ। তবে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে দশ থেকে পনেরটি বিস্ফোরণের খবর জানায়। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার জন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা এ সময় ওই এলাকায় মোতায়েন ছিলেন। নিহত কিশোর সাজ্জাদকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে আসেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এদের অধিকাংশই শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। হযরত মুহাম্মদ (সা.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) শহীদ হওয়ার দিনকে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে থাকে। চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলের জন্য শিয়া মতাবলম্বীরা হোসেনী দালানে সমবেত হলে বিস্ফোরণগুলো ঘটে। হামলায় ৭৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালসহ আশপাশের ক্লিনিকে নেওয়া হয়। হামলার স্থানে রক্তের দাগ। হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো শনিবার ভোররাতে তাজিয়া মিছিলের জন্য হোসনি দালানে সমবেত হন শিয়া মতাবলম্বীরা। এ সময় সেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ ছিলেন বলে ফিরোজ হোসেন নামে তাদের এক নেতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মিছিল শুরুর আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা হোসনি দালানের চারপাশ পরিদর্শন করেন। এর পরপর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।’ বিস্ফোরণের পরে হোসনি দালান চত্বর থেকে দুটি বোমা উদ্ধার করা হয় বলে র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, ‘নিষ্ক্রিয় করতে রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং অন্যটি পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে।’ হোসনি দালান ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মগবাজার ও পল্টন থেকেও তাজিয়া মিছিল বের করেন শিয়া মতাবলম্বীরা। ওই হামলার পর মোহাম্মদপুরে শিয়াদের নিরাপত্তায় বাড়তি পুলিশ-র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে বলে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ কমিটির সভাপতি রাশেদ হায়দার জানিয়েছেন।