শর্করা হচ্ছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস। কিন্তু শর্করা জাতীয় খাবার যেহেতু রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরিবর্তন করে তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের এটা এড়িয়ে চলা উচিত। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে সবারই একটি ধারণা থাকে যে শর্করা জাতীয় খাবার ছাড়াও বেশি কোনো কিছুই খাওয়া যাবে না। কম পরিমাণে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা যদি খাবার সম্পর্কে কিছু ধারণা রাখেন তবে তারা শর্করাসহ অনেক ধরণের খাবারই উপভোগ করতে পারেন।
যেদিন থেকে কারো ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ে সেদিন থেকে তাদের শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে অন্য ধরণের নতুন খাবার খোঁজা শুরু হয়ে যায়। সুস্থ থাকতে তাদের চিনিযুক্ত খাবারও বর্জন করতে হয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা যদি একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা অনুসরণ করে খাবার খান তাহলে অনেক ধরনের শর্করা জাতীয় খাবারও তারা খেতে পারবেন।
শর্করা জাতীয় খাবারের প্রয়োজনীয়তা সবার একই রকম হয়না। ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে কার জন্য ঠিক কতটুকু প্রয়োজন তা জেনে নেয়া।
এখানে ডায়াবেটিক রোগীরা কি উপায়ে শর্করাসহ অন্য খাবার গুলো উপভোগ করতে পারেন তা জানানোর চেষ্টা করছি
সব ধরনের শর্করা জাতীয় খাবার রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। শর্করা সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে। সরল এবং জটিল শর্করা। সরল শর্করা সবসময়ই রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে যেমন বিভিন্ন মিষ্টি ফল, প্রক্রিয়াজাত শস্যের তৈরি খাবার, চিনির তৈরি খাবার, দুধ, সাদা চালের ভাত, সফট ড্রিঙ্কস ইত্যাদি। অন্যদিকে জটিল শর্করা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তের শর্করা মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে। যেমন লো ফ্যাট দই, ননীমুক্ত দুধ, বাদাম, বীজ, ডাল, ভুষিসহ শস্য জাতীয় খাবার, লাল চাল ও আটা, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন ধরনের আঁশ জাতীয় খাবার ইত্যাদি। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা জটিল শর্করা জাতীয় খাবার বেছে নিতে পারেন।
অনেক দিন থেকেই সবাই জানে যে ডায়াবেটিস হলে চিনি সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি অনেক ডাক্তারও এখন বলেন যে কম পরিমাণে একটু চিনি জাতীয় খাদ্য খাবার তালিকায় রাখা উচিত।
খাবার সম্পর্কে একটু জ্ঞান রাখতে হবে। বিশেষ করে কোন খাবারে কি ধরনের শর্করা আছে, আঁশ জাতীয় খাবার কোন গুলো, কোন ধরণের খাবার স্বাস্থ্যকর এবং কার্যকরী ইত্যাদি। উত্তম শর্করা জাতীয় খাবার বেছে নিতে হবে।
ব্যস্ত জীবনে সব সময় ঘরে খাওয়া সম্ভব হয়না। তবে যখনই বাইরে খেতে হবে কিছু দিক অবশ্যই খেয়াল রাখুন। দুপুরে বা রাতের খাবারে কম লবণ যুক্ত স্বাস্থ্যকর হোল গ্রেইন খাবার গুলো রাখুন খাবার তালিকায়। এছাড়া রাখতে পারেন তাজা ফল এবং সবজি।
ডায়াবেটিস হলেই কম খেতে হবে এই ধারণা থাকে অনেকের মাঝেই। আর স্ন্যাক্স বলতেই তেলে ভাজা আর চিনির তৈরি খাবারই সবাই ভেবে থাকে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক ধরণের খাবার রয়েছে সেগুলো ইচ্ছে করলেই তারা খেতে পারেন। খেতে পারেন তাজা ফল বা সবজিও।
রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করা প্রতিরোধ করতে শর্করা জাতীয় খাবারের সাথে প্রোটিন জাতীয় মিলিয়ে খান। এতে খাবারগুলো ধীরে হজম হবে এবং এগুলো ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করবে।
শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার আরো একটি ভাল উপায় হচ্ছে খাবার ভাগ করে খাওয়া। একটি সুষম খাবার তালিকা অনুসরণ করুন এবং একসাথে বেশি না খেয়ে খাবার ভাগ করে খান।
বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিক রোগীদের সব সময় খাবারে শর্করার পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা বেশি কর্মক্ষম তারা কম কর্মক্ষম ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি শর্করা জাতীয় খাবার খেতে পারবেন।
খাবার কেনার সময় খাবারের গায়ে লেখা পুষ্টি উপাদানের পরিমাণের দিকে খেয়াল করুন। সেটা থেকেও খাবার সম্পর্ক ধারণা পেতে পারেন। যে খাবারটি কিনতে চাচ্ছেন তার উপাদানগুলোর পরিমাণও জেনে নিতে পারছেন।
সাধারণত দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুমোদিত থাকে না। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা নন ফ্যাট দুধ খেতে পারেন ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের জন্য।
আখরোট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো এবং এতে কম পরিমাণ শর্করা থাকে। ডায়াবেটিক রোগীরা প্রোটিন সমৃদ্ধ এসব বাদাম খেতে পারেন স্ন্যাক্স হিসেবে।
মিষ্টি ফলসহ বেশ কিছু ফল এবং বেশ কিছু সবজিতে উচ্চ মাত্রার শর্করা থাকে তাই সেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি খাওয়া ঠিক নয়। তবে সেগুলো কম পরিমাণে ইচ্ছে করলেই তারা খেতে পারেন। ডাল ও বিচি জাতীয় খাবার, টমেটো, মিষ্টি আলু, সবুজ শাক সবজি, টক ফল ইত্যাদি তারা কোনো বাধা ছাড়াই খেতে পারেন।